ঝালকাঠি ও বরিশালে হঠাৎ ভ্রমণ, বাড়তি পাওনা ছিলো লঞ্চে জোছনা বিলাস

১ মাসের বেশি ঢাকায় থাকলেই আমার মাথা হ্যাং করে। ৭ মার্চ জয়পুরহাট ভ্রমণের পর এপ্রিল মাসে একটা ট্যুর তাই খুব দরকার ছিলো। শরীর ও মন ঠিক করতে ঘুরে আসলাম ভাসমান পেয়ারা বাজার খ্যাত ভিমরুলীর জেলা ঝালকাঠি এবং বিভিন্ন কারনে বিখ্যাত-কুখ্যাত জেলা বরিশাল।

১৮ এপ্রিল, ২০১৯ বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুর থেকে ঐতিহাসিক ট্যুর দিয়ে সদরঘাট পৌঁছালাম। ঘাটে এডভেঞ্চার ৯, কীর্তনখোলা ১০, সুরভী ৯, সুন্দরবন ১১, পারাবত ১২ দেখে পড়লাম বিপদে; কোনটা ছেড়ে কোনটাই উঠি। সোফায় যাবো ঠিক করে রাখলেও কোনটাতেই সিট পেলাম না।

সবগুলো লঞ্চেই ঢুঁ মেরে শেষমেষ পারাবত-১২’র মাস্টার ব্রিজের সামনে বসে পড়লাম। এই লঞ্চে দেখলাম সামনে কাউকে দাঁড়াতে দেয় না। আমি মাস্টার কেবিনের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসায় আমাকে কিছু বললো না। লঞ্চ মিনিট দশেক চলার পর শুরু হলো আরেক কাহিনী। হ্যান্ড মাইক নিয়ে বলা শুরু করলো, ‘যাদের চারতলায় কেবিন নেই তারা নিচে নেমে যান। ছাদের গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ ঘটনা কি বুঝতে একটা চক্কর দিয়েই জানলাম শুধু শুধু ছাদ থেকে সবাইকে নামাচ্ছে। গেট বন্ধ করে না আর করলেও কিছু সময় পরে খুলে দেয়।

রাতের খাবার নিয়ে এবার বেশ মজার এবং বিরক্তিকর ঘটনা ঘটলো। খাবারের প্রধান মেন্যু ছিলো, রুই মাছ, বোয়াল মাছ, আইড় মাছ, পোয়া মাছ, মুরগী। একটাও পছন্দ না হওয়ায় ভাবলাম ডাল, সবজি আর ভর্তা দিয়ে খেয়ে নিবো। হাত ধুয়ে টেবিলে বসতেই, আলু ভর্তা সহ ভাত দিয়ে গেলো। সবজি আর ডাল চচ্চরি চাইতে বললো, মাছ/মাংস ছাড়া শুধু “ডাল-ভাত” খাওয়াই না।

একা লঞ্চে চড়লে আমি সাধারনত ডাইনিং-এ খাই নাই। লঞ্চের এই ডাকাতি সম্পর্কে তাই কোন ধারনা ছিলো না। যেকোন মাছ ১৫০ টাকা আর মাংস ১২০ টাকা। মাছের যে সাইজ তা ঢাকার যেকোন হোটেলে সর্বোচ্চ ৮০-১২০ টাকা হতে পারে। বেশ অবাক এবং বিরক্ত হলাম। বাধ্য হয়ে, পোয়া মাছ নিলাম। টেবিলের বাকি যারা ছিলো তারাও বিরক্ত। আমার সামনের লোকটা বললো, ‘মাছে তেমন স্বাদ নাই। কিন্তু খাইতে তো হইবো। ডাল আর ভর্তার স্বাদ ভালো থাকায় আমি আরাম করেই খেলাম।

কাউন্টারে বিল দেওয়ার সময় বললাম, ডাল চচ্চরি থাকতেও আমাকে দেয় নাই। শুধু আমাকে না, বারবার না বললে কাউকেই দিচ্ছিলো না। লোকটা শুনলোই না এমন একটা ভাব করে মাথা দুলালো। বুঝলাম নিচতলার ডাইনিং এ আর যাই হোক ভালো সার্ভিস পাওয়ার আশা করা যাবে না। এখানে যারা খায় তাদের কথার তেমন কোন দাম আছে বলেও মনে হলো না। কেবিন বা সোফার ডাইনিং এর হিসাব আলাদা। সার্ভিস পাওয়া যায় সেখানে। পড়তে থাকুন সেই সার্ভিস সম্পর্কেও লিখবো।

আমার লেখা ই-বুক কিনতে এখানে ক্লিক করুন

পারাবতের গতি তুলনামূলক কম। নদীতেও তেমন ঢেউ ছিলো না। আকাশে ছিলো ভরাট চাঁদ। পরদিন পূর্ণিমা কিন্তু খালি চোখে বোঝার সাধ্যি নেই। নদীতে কিছু দূর পর পর ২-৩টা করে নৌকা ভাসছে। মাছ ধরার জন্য না কিসের নৌকা ঠিক বুঝতে পারলাম না। ইউটিউব থেকে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটা ডাউনলোডে করে কানে ইয়ারফোন দিয়ে বার বার শুনছি। মানুষ কেনো জোছনা প্রেমী হয় তা যে কেউ একবার নদীতে ভরা জোছনা দেখলেই বুঝবে। আরো একবার নতুন করে জোছনার প্রেমে পড়লাম।

ভোরবেলা ঘাটে পৌঁছালাম সবার পরে। লঞ্চ থেকে নেমে মাহিন্দ্রায় করে সরাসরি চলে গেলাম রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড। ঝালকাঠি যাওয়ার ৬টার বাসে বসার জায়গা নেই। সারারাত জার্নি করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ইচ্ছা বা তাড়াহুড়া কোনটাই ছিলো না। ৬.৩০ মিনিটের বাসের টিকেট কেটে পরোটা আর ডাল-ভাজি দিয়ে হালকা নাস্তা করে নিলাম।

বাসে ভিআইপি সিট, এক্সট্রা সিট সহ নানা নামের সিট। আমি সাধারন মানুষ, আমার সিটও সাধারন। ঝালকাঠি যাওয়ার দুপাশের রাস্তা দেখে ভালো লাগলো। পিচঢালা আর দুপাশে গাছের সারি। কেমন শান্তি, শান্তি পরিবেশ। ৩০ মিনিটেরও কম সময়ে পৌঁছে গেলাম।

বাস থেকে নেমে দেখি লাইন ধরে অটো দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীরা যে যার মত অটোতে করে চলে গেলো। আমার তাড়া না থাকায় বসলাম। এক অটোওয়ালা ভাই, হাসতে হাসতে বেশ কিছু মজার কথা বলে যাত্রী নিয়ে চলে গেলো। ঝালকাঠি ভ্রমণের শুরুটা বেশ ভালো হলো। মানুষের হাসি মুখে কথা বলা শুনলে কার না ভালো লাগে?

আমার গন্তব্য কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি। কীর্ত্তিপাশা যেতে বাজারে যাওয়া লাগবে জেনে নিয়ে এক অটোতে উঠে বসলাম। বাজার ছাড়িয়ে অটো লঞ্চ টার্মিনালে নামালো। আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি তবে ঝালকাঠি জেলার লঞ্চঘাটও দেখা হয়ে যাবে ভেবে খুশি হলাম।

লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখি এম.ভি.বাঙ্গালী ঘাটে ভিড়ছে। দেশের অন্যতম সুন্দর গাবখান চ্যানেল পাড়ি দিয়ে এই লঞ্চ যাবে মংলা পর্যন্ত। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী উঠা-নামা দেখে অটোতে করে চলে গেলাম কলেজ মোড়। প্রথমে প্ল্যান ছিলো আগে যাবো কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি সেখান থেকে ভিমরুলী। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আগে ভিমরুলী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভিমরুলী যাওয়ার জন্য অটোতে চড়ে জানলাম কীর্ত্তিপাশা পার হয়ে ভিমরুলী যেতে হয়।

কীর্ত্তিপাশা বাজার নেমে অটো ড্রাইভারকে কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই দেখিয়ে দিলো। হেঁটে গেলে ২ মিনিট লাগবে। এইখানে একটা ভুল করলাম। জমিদার বাড়ি পরে দেখবো ভেবে ভিমরুলী যাওয়ার অটোতে চড়ে বসলাম। যদি জমিদার বাড়ি দেখে যেতাম তাহলে একই পথে না এসে ভিমরুলী থেকে অন্য পথে ঝালকাঠি যাওয়া যেত।

ভিমরুলী যাওয়ার পথে চারপাশ দেখে মন ভরে গেলো। নদী-খালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য অসংখ্য ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। ২০১৬ তে ভাসমান পেয়ারা বাজার ঘুরতে এসে দেখে গিয়েছিলাম।

ভিমরুলীতে নেমে আমি অবাক। কিছুই চেনা যাচ্ছে না। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। পেয়ারার মৌসুম না হওয়ায় জমজমাট অবস্থাও নেই। এক দোকানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এটাই কি ভিমরুলী বাজার? লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, জ্বি। তারপর জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি জন্য এসেছেন একটু বিস্তারিত বলেন তো। দেশ দেখার শখের কথা বললাম। শুনেই হাত বাড়িয়ে আমার হাত জড়িয়ে ধরলো। এরপর বেশ অনেকটা সময় ধরে গল্প করলাম। বিদায় নিয়ে ফেরার সময় তার একটা মন্তব্য শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো। চাইলে ফিরে গিয়ে ভুল ভাঙ্গাতে পারতাম কিন্তু ইচ্ছে হলো না।

কীর্ত্তিপাশা জমিদার যেতে আবার অটোতে উঠলাম। জমিদার বাড়ি এখন স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শুক্রবার হওয়ায় কোন মানুষ নেই। অজানা কোন কারনে বাড়ি প্রাঙ্গণে ঢুকেই গা ছমছম করছিলো। ভয়ে ভয়ে পুরো চারপাশ ঘুরে দেখলেও ভিতরে বা ছাদে যাওয়ার সাহস হলো না। বাইরে থেকেই কয়েকটা ছবি তুলে বাজারে চলে আসলাম।

কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা জানা যাক, (বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে)

“কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় একশতক বছর আগে। বিক্রমপুর জমিদারের বংশধরের কিছু অংশ প্রায় ১৯ শতকের শেষ সময়ে ঝালকাঠি জেলার কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯ শতকের প্রথম দিকে বিক্রমপুর জমিদার বংশের রাজা রাম সেনগুপ্ত এই কীর্ত্তিপাশা গ্রামে আসেন। এখানে তিনি তার দুই ছেলের জন্য দুইটি বাড়ি নির্মাণ করেন। বড় ছেলের জন্য পূর্ব বাড়ি যা ছিল ১০ আনা বড় হিস্যা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। আর ছোট ছেলের জন্য পূর্ব বাড়ি যা ৬ আনা ছোট হিস্যা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। ছোট ছেলের জমিদার বাড়ি অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আর বড় ছেলের জমিদার বাড়ির কিছু অংশ টিকে আছে। এই জমিদার বাড়ির জমিদারপুত্রকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়। এবং তার স্ত্রীও তার সাথে মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাদেরকে একসাথে সমাধি করা হয়। এখানে এখনো একটি নাট মন্দির, হল ঘর, ছোট ও বড় মন্দির আছে। এই জমিদার বংশের দুজন বিখ্যাত ব্যক্তি হচ্ছেন রোহিনী রায় চৌধুরী ও তপন রায় চৌধুরী।”

বাজারের এক দোকানে রসগোল্লা খেলাম। তেমন আহামরি কিছু মনে হলো না, তবে স্বাদ ভালো। গাবখান সেতু যাওয়ার জন্য ঝালকাঠি যাওয়ার অটোতে উঠলাম। রাস্তা চেনা না থাকায় এখানে একটা ভুল হলো। কলেজ মোড় না নেমে আমি চলে গেলাম সদরে, কালীবাড়ী রোড। আবার অন্য অটোতে করে তাই কলেজ মোড় আসতে হলো। এবার গাবখান সেতুতে যাওয়ার অটোতেই উঠলাম।

গাবখান সেতু সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি রকেট স্টীমার লঞ্চ জার্নি নিয়ে বিস্তারিত পড়ার সময়। পিরোজপুরের সন্ধ্যা ও ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীকে সংযোগ করেছে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের গাবখান চ্যানেল। বলা হয়ে থাকে, গাবখান চ্যানেল দেশের অন্যতম সুন্দর নৌরুট। সেই লোভ থেকেই সেতু দেখার শখ জাগে। সেতু নিয়ে তাই নেটে আরো ঘাটাঘাটি করে জানতে পারি, সেতুটি অনেক উঁচু এবং সেতুর উপর থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়।

অটোতে করে সেতুতে উঠার সময়ই টের পেলাম আসলেই অনেক উঁচু। বেশ অনেক সময় ধরে উপরে উঠতে হলো। সেতুর পাশে থাকা বিশাল সব রেইন ট্রি (কড়ই গাছ) একসময় সেতুর উচ্চতার কাছে হার মানলো। সেতু ভালোভাবে দেখার জন্য সেতু পার হয়ে অটো থেকে নেমে পড়লাম, হাঁটা দিলাম সেতুর দিকে।

পায়ে হেঁটে চারপাশ দেখতে দেখতে উঠছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কত লুকানো সৌন্দর্য আছে অথচ আমরা তার কিছুই জানি না। ব্রিজে দাঁড়িয়ে জাহাজ ও নৌকার চলাচল দেখলাম। অত উঁচু থেকে দেখতেও বেশ লাগছিলো। ছবি তুলে, ভিডিও করে বাসে উঠতে ব্রিজের এইপাড়ে চলে আসলাম।

যানবাহন নিয়ে ব্রিজে উঠতে টোল দিতে হয়। কয়েকটি ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন থামিয়ে টোল আদায় করছে। অনেকেই টোল না দিয়ে চলে যাচ্ছে। টোল তোলার কাহিনী দেখতে দেখতে বরিশালগামী বিআরটিসি বাস চলে আসলো। ঝালকাঠি জেলা ঘোরার সমাপ্তি টেনে চললাম বরিশালে।

জুম্মার নামাজ গুঠিয়া মসজিদে পড়বো ঠিক করে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে নেমে মাহিন্দ্রায় করে গুঠিয়া চলে গেলাম। নামাজ শেষে মসজিদের বিপরীতের এক দোকানে বসলাম গুঠিয়ার বিখ্যাত সন্দেশ খেতে। স্বাদ বেশ ভালো। শুক্রবার ২টার পর মসজিদ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেয়। মসজিদ ছাড়া দেখার কিছু নেই, চলে গেলাম দুর্গাসাগর দীঘি।

দুর্গাসাগর দীঘির মজার ব্যাপার হচ্ছে দীঘির মাঝখানে দ্বীপের মত একটা জায়গা রয়েছে। এছাড়া দীঘির চারপাশে চক্কর দেওয়ার জন্য হাঁটার রাস্তা রয়েছে। হাঁটতে বেশি সময় লাগবে না মনে হলেও ৩০-৪০ মিনিট লেগে যায়। আগের বার ঘুরতে এসে পুরোটা হেঁটেছিলাম। এবার দেখলাম একটা খাঁচায় বেশ কিছু হরিন আটকে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গেলে এই জিনিসিটাই আমার পছন্দ হয় না। হরিণ আলাদাভাবে দেখার কি আছে?

দীঘির পানি দেখে লোভ লাগলেও হাতে সময় না থাকায় গোসল করতে পারলাম না। কিছু সময় দীঘির পাড়ে বসে থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। শহরে ঢুকে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে গেলাম ৩০ গোডাউন। এটি মূলত কীর্তনখোলা নদীর পাড়। বিকেলে অনেক মানুষ সময় কাটাতে আসে। চাইলে নৌকায় করে নদীতে ঘোরা যায়।

মানুষের সমাগম ভালো থাকায় অনেক ধরনের খাবার দোকান হয়েছে। বোম্বাই মরিচ দিয়ে বানানো সিঙ্গারা আর আলুর চপ খেলাম। খেতে দারুন লাগলেও পেটে আগুন ধরে গিয়েছিলো। ব্যস্ত একটি দিন কাটিয়ে সময় হয়েছে বাড়ি ফেরার।

সন্ধ্যার আধাঁরে বরিশাল শহরকে বিদায় জানিয়ে লঞ্চ টার্মিনাল চলে গেলাম। ইচ্ছা ছিলো কীর্তনখোলা ১০ এ যাবো কিন্তু সোফা মিললো এডভেঞ্চার ৯ এ। টিকেট করে সোফায় শুয়েই ঘুম।

ঘুম ভাঙ্গলো ১০টার দিকে। এসি ঠিকভাবে কাজ না করায় রুম গরম হয়ে গেছে। মেজাজ খারাপ করে বাইরে এসে জানলাম প্রায়ই বিভিন্ন লঞ্চে রাতে এসির এইধরনের সমস্যা হয়। বিরক্ত হয়ে বারান্দার চেয়ারে বসলাম। আকাশে জোছনা দেখে মন ভালো হয়ে গেলো। ইচ্ছে হলো বারান্দায় বসেই রাতের খাবার খাওয়ার।

কেবিন বয়কে রাতের খাবার বারান্দায় বসে খাবো বলায় কিছুটা অবাক হলো কিন্তু কিছু বললো না। কিছুক্ষন পর সোনালি মুরগী, ডাল চর্চরি, আলু ভর্তা, ভাত, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, লেবু নিয়ে হাজির। একপাশে কীর্তনখোলা নদী, আকাশে ভরা পূর্ণিমা আর সামনে টেবিলে ধবধবে সাদা ভাত। নিজেকে রাজা রাজা মনে হচ্ছিলো। মনের শান্তি মিটিয়ে খেয়ে নিলাম।

সারাদিনের জার্নিতে ক্লান্ত থাকায় সোফায় গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। শেষ হলো আরেকটি সোলো ট্যুরের।

বি.দ্র.যারা টুকটাক ঘোরাঘুরি করেন। অনুরোধ থাকবে জীবনে একবারের জন্য হলেও কেবিনের খোলা বারান্দায় বসে ডিনার করবেন, যদি সম্ভব হয় তবে পূর্ণিমা রাতে। সারাজীবন মনে থাকবে কথা দিচ্ছি।

সবার সুবিধার্থে যাতায়াত বিবরন এবং খরচ দিয়ে দিচ্ছি,

  • সদরঘাট থেকে পারাবত ১২ লঞ্চে বরিশাল ২০০ টাকা (লঞ্চের ডেক)
  • লঞ্চঘাট থেকে মাহিন্দ্রায় রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড ১৫ টাকা
  • রুপাতলী থেকে বাসে ঝালকাঠি বাসস্ট্যান্ড ৩০ টাকা (৩০ মিনিট)
  • বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোতে ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনাল ১৫ টাকা
  • লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অটোতে কলেজ মোড় ১০ টাকা
  • কলেজ মোড় থেকে অটোতে কৃর্ত্তিপাশা বাজার ২০ টাকা
  • কৃর্ত্তিপাশা বাজার থেকে অটোতে ভিমরুলী ৩০ টাকা (আসলে ১৫টাকা)
  • ভিমরুলী থেকে অটোতে কৃর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি ১৫ টাকা
  • কৃর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি থেকে হেঁটে কৃর্ত্তিপাশা বাজার
  • কৃর্ত্তিপাশা বাজার থেকে অটোতে কালীবাড়ী রোড ২০ টাকা
  • কালীবাড়ী রোড থেকে অটোতে কলেজ মোড় ৫ টাকা
  • কলেজ মোড় থেকে অটোতে গাবখান সেতুর ওইপাড় ১৫ টাকা
  • গাবখান সেতু থেকে হেঁটে এই পাড়
  • গাবখান সেতু থেকে বিআরটিসি বাসে নথুল্লাবাদ, বরিশাল ৪০ টাকা
  • নথুল্লাবাদ থেকে মাহিন্দ্রায় গুঠিয়া মসজিদ ৩০ টাকা
  • গুঠিয়া মসজিদ থেকে মাহিন্দ্রায় দুর্গাসাগর দীঘি ১৫ টাকা
  • দুর্গাসাগর দীঘি থেকে মাহিন্দ্রায় নথুল্লাবাদ ২০ টাকা
  • নথুল্লাবাদ থেকে অটোতে কাকলী মোড় ১০ টাকা
  • কাকলী মোড় থেকে অটোতে পুলিশ লাইন্স ৫ টাকা
  • পুলিশ লাইন্স থেকে রিজার্ভ অটোতে ৩০ গোডাউন ৫০ টাকা
  • ৩০ গোডাউন থেকে রিকশায় জিলা স্কুল ৫০ টাকা
  • জিলা স্কুল থেকে রিকশায় লঞ্চ টার্মিনাল ২০ টাকা
  • বরিশাল থেকে এডভেঞ্চার ৯ লঞ্চে সদরঘাট ৬০০ টাকা (সোফা)
শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দিন

Similar Posts