সিএসই ডিপার্টমেন্টাল ট্যুরে রাঙ্গামাটি – ভ্রমণের স্মৃতিকথা (পর্ব-৪.১)
সিএসই ডিপার্টমেন্ট থেকে ট্যুরে যাবে। রাঙ্গামাটি যাওয়া হবে ঠিক হলো। প্রথমে ইচ্ছা ছিলো আয়োজনের সাথে থাকবো না। রিলাক্স মুডে যাবো, চিল করবো। কিন্তু ট্যুরের ডিটেইলস শুনে আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। আনিস স্যারের সাথে কথা বলে ট্যুরের প্ল্যানিং চেঞ্জ করে নিলাম। ডিপার্টমেন্ট থেকে শেষ ট্যুর। এটা মনের মত না হলে হয়?
২০ এপ্রিল, ২০১৬। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আকাংখিত সেই দিন। সারাদিন পুরো সেমিস্টারের আমলনামা নিয়ে হা-হুতাশ করে রাত ১০.৩০ মিনিটে ইস্ট ওয়েস্টের সামনে থেকে ৩৬ জনের দল নিয়ে বাসে চড়ে বসলাম। বাস ছাড়ার কিছুক্ষন পরেই গানের আসর বসলো। রাত যত গভীর হয়, আসর তত জমে উঠে. . .
আপন রে. . .আপন ন ন ন বলে চিল্লানো। রাহাত ভাইয়ের রেডিও ঢোল। মিলু আর ইমরান ভাইয়ের একের পর এক গেয়ে যাওয়া গান। রাত যে কখন ভোর হয়ে গেলো খেয়াল করে উঠা হয় নাই। হঠাৎ টের পেলাম বাস বিপদজনক সব টার্ন নিচ্ছে, আমরা পাহাড়ী রাস্তায় চলে এসেছি। এ যেন অন্য এক রাজ্য। ইট-পাথরের শহরে বসে কল্পনা করা যায় না।
আমার বান্দরবনের কথা মনে পড়ে যায়। আমি চোখ বন্ধ করে বাসের টার্নগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করি। সেই চেষ্টার ফল হয়, ঘুম! সবাই তখন ব্যস্ত নতুন এক খেলায়. . .
সকালে হোটেল নাদিশায় পৌঁছে সারারাতের নির্ঘুম চোখ, ক্লান্ত শরীর সবকিছু ছাপিয়ে নতুন উদ্যমে চাঙ্গা হয়ে উঠলাম সবাই। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম। এবার আমরা যাবো বেতবুনিয়া ভূ-উপকেন্দ্র।
আমাদের ট্যুরের টি-শার্টের রঙ ছিলো কমলা। এই রঙ নিয়ে সবাই বিভিন্ন কথা বললেও আনিস স্যার এব্যাপারে ভীষণ কড়া ছিলেন। বেতবুনিয়া যাওয়ার পথে রাস্তায় বাস থামিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে এই রঙের মহত্ব বোঝা গেলো। ৩৬ জনের দলটাকে দেখতেও ভালো লাগছে আর ছবিও খারাপ আসছিলো না।
আমার লেখা ই-বুক কিনতে এখানে ক্লিক করুন
উপকেন্দ্রের সামনে সুন্দর রাস্তা পেয়ে সবাই ক্যামেরা বের করে একের পর এক ছবি তোলা শুরু করলো। কারো প্রোফাইল ছবি, কারো কাভার ছবি, কখনোবা গ্রুপ ছবি। ছবি তোলার কোন শেষ নেই। পিছে থেকে হয়ত কোন গাড়ি বা সিএনজি আসে সবাই দৌড়ে রাস্তা থেকে সরে যায়। গাড়ি চলে গেলে আবার রাস্তার মাঝখানে সবাই।
ভূ-উপকেন্দ্রের ভিতরে ঘুরাঘুরি শেষে বাসের কাছে এসে জানা গেল ড্রাইভার নেই। সে শহরে চলে গেছে, আসতে দেরি হবে। সময় পেয়ে এবার স্যারদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠলাম সবাই। রাস্তার পাশে ছাউনি তে বসে পাহাড়ী বাতাস খেতে খেতে আড্ডা বেশ জমে উঠলো।
হঠাৎ সবার চোখ পড়ে ভূ-উপকেন্দ্রের ভিতরে থাকা আম গাছের দিকে। থোকায় থোকায় আম ঝুলে থাকতে দেখে কয়েকজনের শখ হয় আম খাবে। শুরু হয় ঢিল ছোঁড়া। আপন একটি আম পাড়তে সফল হয়। ঝরে পড়া আরো একটা আম কুড়িয়ে পায় তুষার। আরো আম পাড়ার ইচ্ছা থাকলেও স্যাররা দেখে ফেলায় আর কেউ ঢিল ছোড়ার সাহস করে নাই। ততক্ষনে ড্রাইভার চলে আসলে আমরা আবার হোটেলের দিকে রওনা হই।
দুপুরের খাবার খাওয়ার পর কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সবাই রুমে চলে যায়। দুই স্যার সহ আমরা কয়েকজন তখন হোটেলের সামনে ভ্যান থেকে আনারাস খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি…
বিকেলে শহর ঘুরতে যাওয়ার কথা থাকলেও হোটেলের ছাদে উঠে আমাদের সে ইচ্ছা চলে যায়। ছাদ থেকে রাঙ্গামাটির শহরের পুরোটাই বলতে গেলে চোখে পড়ছিলো। হোটেলের দুই পাশে দুই ধরনের দৃশ্য। পশ্চিমে শহুরে ঘর বাড়ি, অনেক দূরে লেক আর পাহাড়। পূর্বে একটা স্কুল তার পরেই লেক আর দূরে পাহাড়। উত্তর-দক্ষিনেও পাহাড়, নদী, ঘর বাড়ি। আর সে কি বাতাস। এমন ছাদ ছেড়ে নিচে যাবো তা হতেই পারে না। এরমধ্যে আবার আইসক্রিম পার্টি মজাটা আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়।
সূর্যের অস্ত যাওয়া দেখতে দেখতে পাহাড়ী সন্ধ্যা নেমে আসে। পূর্নিমার আগের রাত হওয়ার আকাশে চাঁদও উঠে বিশাল। সে চাঁদের আলো লেকের পানিতে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি হয় এক অতিপ্রাকৃত দৃশ্যের, বসে গানের আসর। আসর চলে রাতের খাবারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। চাঁদ, গান আর সাথে লেকের সৌন্দর্য…ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
নবাব ইউসুফ আলি স্যার আমাদের বলছিলেন, “তোমরা এখন যেই মুহূর্তটা কাটাচ্ছো। এই মুহুর্তটা এমনভাবে দ্বিতীয়বার আর কোনদিন পাবে না।” তখন উনার কথার ভাবার্থ সেভাবে না বুঝলেও এখন মনে হয় আসলেই তো সেই মুহূর্ত আর তো কোনদিন এমনিভাবে পাবো না…
দ্বিতীয় পর্বঃ সিএসই ডিপার্টমেন্টাল ট্যুরে রাঙ্গামাটি (পর্ব-৪.২)