কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে হজরতপুর ইউনিয়ন
বিশিষ্ট গরু প্রেমী নাফিজ আর রাঘিবের সাথে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্ল্যান হচ্ছিলো হজরতপুর ইউনিয়ন ঘুরতে যাবো। কিন্তু কারো সবার সময় মিলে না। অনেক হিসাব নিকাশের পর কালকে সিদ্ধান্ত হলো আজকে(২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬) আমি আর নাফিজ যাবো।
মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে দুইজন একত্রিত হলাম। সিনেমা হলে সিনেমা না দেখে আমরা রওনা হলাম গাবতলী যাবার টেম্পুস্ট্যান্ড মিরপুর-১ এরদিকে। শনিবার হওয়ায় রাস্তা বেশ ফাঁকা ছিলো। খুব তাড়াতাড়ি গাবতলী পর্বত পৌঁছে গেলাম। গাবতলী থেকে আমরা হেমায়েতপুর বাজারের উদ্দেশ্যে বাসে উঠলাম। হেমায়েতপুর বাজার থেকে লেগুনাতে করে আমাদের গন্তব্যস্থল হজরতপুর ইউনিয়ন।
হেমায়েতপুর বাজার থেকে হজরতপুর যাবার রাস্তাটা বেশ সুন্দর। শীতকাল হওয়ায় দুপুর বেলাতেও বেশ কুয়াশা ছিলো। তবে তেমন ঠান্ডা ছিলো না। আবহাওয়া এতটা আরামদায়ক ছিলো যে রাস্তার পাশের ইটের ভাটাকেও বেশ মাধুর্য্যময় কোন কিছু মনে হচ্ছিলো। বেশ কিছুক্ষন লেগুনা চলার পরে আমরা গ্রাম্য পরিবেশে ঢুকে পড়লাম। রাস্তার দুইপাশে বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা সুন্দর পরিবেশ। ঢাকার যানজটপূর্ন কোলাহলের এতকাছে এত সুন্দর কোন গ্রাম আছে ভাবা যায় না। তবে আমার অবাক করার মত আরো অনেক কিছু দেখার তখনো বাকি ছিল।
আমি বেশ কয়েকদিন ধরেই সরিষা ক্ষেতের সন্ধান করছিলাম। রাস্তার দুইপাশে সরিষা ক্ষেতের সন্ধানও পাওয়া গেল। তবে পুরো মাঠ জুড়ে সরিষার চাষ হচ্ছে এমন না। খন্ড খন্ড ভাবে কয়েকটা জমিতে। তা সে যাই হোক হলুদ রঙের সরিষা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল।
প্রায় ৩০ মিনিট পর আমাদের কাঙ্খিত হজরতপুর বাজারে চলে আসলাম। টেম্পু যেখানে নামিয়ে দিলো সেখান থেকে বাজারের রাস্তার শেষ মাথায় যেয়ে দেখি, নদী। আশেপাশে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম নদীর নাম, কালীগঙ্গা।
নদীর পাড়ের বাজার আমাকে বেশ আকৃষ্ট করলো। বাজারের সাথে গরুর হাট। প্রতি শনিবার এই হাট বসে। দূর দূরান্ত থেকে ট্রলারে করে গরু এই হাটে নিয়ে আসা হয়। বেশ বড়সড় হাট। গাভী, ষাড় গরু, বাছুর, ছাগল, ইন্ডিয়ান বলদ, অস্ট্রেলিয়ান গাভী সব ধরনের গরু-ছাগল এই হাটে বিক্রি করা হয়।
শীতকাল হওয়ায় নদীতে পানি ছিলো অনেক কম। বর্ষাকালে পানি নাকি একেবারে রাস্তার কাছে চলে আসে। তখনকার দৃশ্য কল্পনা করে বেশ কষ্ট পেলাম। বর্ষাকালে আসলে আরো ভালো হতো। সতেজ, সবুজ সবকিছু দেখতে পারতাম।
গরুর হাট ঘোরা শেষে হাটের পাশে এক মুড়ির দোকান দেখলাম। বড় এক থালায় মুড়ি বিক্রি হচ্ছে। দুই প্রকার মশলা, বুট, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, শশা, টমেটো দিয়ে মাখানো হয়। কেউ হাত দিয়ে মাখিয়ে খায়, কেউ চামচ দিয়ে মাখিয়ে খায়। দেখে বেশ লোভ লাগায় এক বোল নিয়ে নিলাম। ২০ টাকা বোল। স্বাদ এক কথায় অসাধারন। ২০ টাকার মুড়ি একটানে একাই খেয়ে ফেললাম। স্বাদ এত ভালো ছিলো যে খেতে কোন কষ্টই হয় নি।
মুড়ি খাওয়া শেষে আবার বাজারে চলে আসলাম। এক দোকানে বসে তিন রঙের মিষ্টি খেলাম- সাদা, লাল, কালো। এরমধ্যে আমার প্রিয় কালো মিষ্টি ছাড়া বাকি দুইটার স্বাদ ভালো। এরপর খেলাম পেঁয়াজু। ২ টাকা পিস। গ্রাম হিসেবে ব্রিক্রি করে। ১০ টাকার দিতে বললে ৫ টা দেয়। ঘন্টা দুয়েকের ঘুরাঘুরিতেই জায়গাটা বেশ পছন্দ হলো। মনে মনে ঠিক করলাম আবার আসতে হবে।