বর্ষণমুখর দিনে আড়াইহাজার – ভ্রমণের স্মৃতিকথা (পর্ব-৫)
২০১৬ সালে ঠিক করি বাংলাদেশ দেখতে হবে। কিন্তু বন্ধুরা জনপ্রিয় স্থান ছাড়া অন্য কোথাও ঘুরতে যায় না। বান্দরবান, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সিলেট একই জায়গা বার বার। নতুন জায়গা দেখতে হলে হয় একা যেতে হবে অথবা অপরিচিত কারো সাথে যেতে হবে। সেই থেকেই পথচলা শুরু…
ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন ট্রাভেল গ্রুপ তখন বর্তমানের মত এতটা প্রসারিত হয় নি। অল্প কিছু গ্রুপ ছিলো। এর মধ্যে বেড়াই বাংলাদেশ গ্রুপকে ফলো করতাম। একদিন দেখলাম, বেড়াই বাংলাদেশ থেকে নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় ডে ট্যুরে যাবে। বিস্তারিত পড়ে ভালো লাগলো। প্রয়াত মাহমুদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে সিট বুকিং দিলাম।
১৩ মে সকাল। ৬.১০ মিনিটে এল্যার্ম বেজে উঠলো। মনে মনে চিন্তা করলাম এই সাত সকালে স্বাদের ঘুম ভেঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার আসলেই কি কোন দরকার আছে? তাও আবার কাউকে চিনি?
চরম সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেই বের হলাম। আরিয়ান ভাই মিরপুর থেকে আমাকে মাইক্রোবাসে উঠালেন। মাহমুদ ভাইয়ের যাওয়ার কথা থাকলেও জরুরী কাজ পড়ে যাওয়ায় তিনি যাবেন না। আরিয়ান ভাই ট্যুর পরিচালনা করবেন।
মিরপুর-১১ নাম্বার রাব্বানী হোটেলে সকালের নাস্তা করে নিলাম। ৩০০ ফিট থেকে আরেকটা প্রাইভেট কার আমাদের সাথে যোগ দিলো। কাঞ্চনব্রিজ পার হয়ে আমরা আড়াইহাজার প্রবেশ করলাম।
প্রথমে গেলাম এন্টিক শাহিনুর ভাইয়ের বাসায়। সেখানে মাইক্রো সিঙ্গারা, এন্টিক চা খেতে খেতে আড্ডা জমে উঠলো। শাহিনুর ভাইয়ের পোষা টিয়া পাখি ছিলো, নাম রকি। ভাইয়ের বাসায় গেলে সবাই রকিকে কাঁধে নিয়ে সেলফি তোলে। আমরাও তুললাম।শাহিনুর ভাই আমাদেরকে তার নিজ হাতে করা বাগান, পাখিশালা ঘুরিয়ে দেখালেন।
শাহিনুর ভাইয়ের বাসা থেকে চলে গেলাম মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠা চৌদ্দার চরে। মেঘনা নদীতে গোসল করার জন্যই এখানে আসা। নদী পাড়ে বালু দেখে সমুদ্রের সৈকতের মত লাগে। দিনটাও ছিলো মেঘলা। সবমিলিয়ে গোসল করার জন্য সেরা পরিবেশ।
দেরি না করি আমরাও পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অবাক করা বিষয় হচ্ছে এখানে বালু পানির অনেক নিচ পর্যন্ত সমতল। তাই ডুবে যাওয়ার বা কোন অঘটন ঘটার সম্ভাবনা নেই। গোসল করতে করতেই বৃষ্টি শুরু হলো। এখানেও নতুন এক জিনিস দেখলাম। নদীর পানি গরম হয়ে আছে। শরীরের যতটুকু অংশ পানির উপরে আছে তা জমে যাওয়ার মত অবস্থা আর নিচের অংশ আরামদায়ক গরম।
বৃষ্টিতে গোসলের আনন্দ দ্বিগুন হয়ে গেলো। কিন্তু ব্রজপাত শুরু হলো। চোখের সামনেই নদীতে বাজ পড়তে দেখে আমরা নৌকায় আশ্রয় নিলাম। জড়োসড়ো হয়ে বসে বাজ পড়ার শব্দ শুনছিলাম আর মনে হচ্ছিলো এই বুঝি নৌকার উপর বাজ পড়ে। আল্লাহ রহমতে তেমন কিছু হয় নাই। ব্রজপাত থেমে যেতেই আবার সব নদীতে। মনের স্বাদ মিটিয়ে গোসল করলাম।
নদী থেকে যখন উঠলাম ততক্ষনে পেটে ক্ষুধার আগুন জ্বলছে। দুপুরের খাবারও হলো জম্পেশ। খাওয়া শেষে কাছেই এক জমিদার বাড়ি ঘুরতে গেলাম। জমিদার বাড়িতে বর্তমানে মানুষ বসবাস করে। আমরা চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ছবি তুললাম।
আমার লেখা ই-বুক কিনতে এখানে ক্লিক করুন
হঠাৎ করে আশরাফ ভাই ফোন দিয়ে তার বাগান বাড়িতে যেতে বললো। আমরাও গাড়ি নিয়ে ছুটলাম। বিশাল খোলা মাঠের মাঝে ঘর। চারপাশে মাঠ ছাড়া কিছু নেই। আশরাফ ভাই মুড়ি বানালেন। অসাধারন এক চা বানিয়ে খাওয়ালেন। সাথে ছিলো এন্টিক আলু পুরি। বারান্দায় বসে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখেও মজা। ইচ্ছে হচ্ছিলো রাতটা থেকে যাই…
তবে রাত থাকা হয় নাই। ঘন্টাখানেক আড্ডা দিয়ে আমরা ঢাকার পথ ধরি…
পরের পর্বঃ লিচু বাগান দেখতে ঈশ্বরদী সাথে বোনাস লালন শাহ মাজার
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ Foridi Numan ভাই