গোলাপ গ্রাম ভ্রমণ গাইড (২০২৪)
ঢাকায় বিকেল কাটানোর অসাধারন একটি জায়গা হতে পারে গোলাপ গ্রাম (Golap Gram) খ্যাত সাদুল্লাপুর গ্রাম।
গোলাপ ছাড়াও এই গ্রামে জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা ফুলের চাষও হয়ে থাকে।
গোলাপ গ্রাম কিভাবে যাবো
বেশ কয়েকভাবে যাওয়া যায়। সবগুলো রুট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো।
মিরপুর-১ দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে ট্রলারে
ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে প্রথমে মিরপুর-১ বাসষ্ট্যান্ড আসতে হবে। এরপর রিকশায় দিয়াবাড়ি বটতলা(উত্তরা দিয়াবাড়ি নয়)। ভাড়া নিবে ৪০/৫০ টাকা। বাসে আসলে আলিফ, শ্রাবনী, হোমনা বাস দিয়াবাড়ির সামনে দিয়ে যায়। ভাড়া ১০ টাকা।
দিয়াবাড়ী ঘাট থেকে ৩০ মিনিট পর পর লোকাল ট্রলার সাদুল্লাপুরের উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়। সকাল ৮.৩০ থেকে ট্রলার চলাচল শুরু হয়। বর্ষায় যেতে সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট। শীতে নদীতে পানি কম থাকলে ৪০-৫০ মিনিট সময় লাগবে। ভাড়া ৪০ টাকা। মনে রাখবেন সন্ধ্যায় ৬টার পর লোকাল ট্রলার চলাচল করে না।
ইঞ্জিনের শব্দ শুনতে না চাইলে ও নিজেদের মত করে নদী ঘুরে দেখতে চাইলে। বৈঠা নৌকা অথবা ট্রলার রিজার্ভ করে যাওয়া যায়। ভাড়া আলোচনা সাপেক্ষে।
ট্রলারে না গিয়ে বাস বা নিজস্ব পরিবহনে যেতে চাইলে
রুট-১ঃ মিরপুর শাহআলী মাজারের সামনে কোনাবাড়ী বাসষ্ট্যান্ড থেকে বাসে করে আকরান বাজার। আকরান বাজার থেকে অটোতে করে ফুলের বাজার কিংবা সাদুল্লাপুর গ্রাম। নিজস্ব পরিবহনেও এই পথ দিয়ে আসা যাবে।
রুট-২ঃ সাভার থেকে সাভার চৌরংগী মার্কেটের সামনে থেকে লেগুনা/মিনি বাস আসে আকরান বাজার। এরপর আকরান বাজার থেকে অটোতে গোলাপ গ্রাম। নিজস্ব পরিবহনে এই পথ দিয়ে আসা যাবে।
রুট-৩ঃ আবদুল্লাহপুর/উত্তরা থেকে প্রথমে দিয়াবাড়ি। দিয়াবাড়ি থেকে লেগুনা/লোকাল গাড়িতে বিরুলিয়া ব্রিজ। ব্রিজ থেকে অটো/মিনি বাসে আকরান বাজার। সেখান থেকে অটোতে সাদুল্লাপুর গ্রাম। নিজস্ব পরিবহনেও এই পথ দিয়ে আসা যাবে।
রুট-৪ঃ নবীনগর/জিরাবো/সাভার থেকে আলিফ/মোহনা পরিবহন বাসে বিরুলিয়া ব্রিজ। ব্রিজ থেকে অটো/মিনি বাসে করে আকরান বাজার সেখান অটোতে থেকে সাদুল্লাপুর গ্রাম। নিজস্ব পরিবহনে এই পথ দিয়ে আসা যাবে।
যা যা দেখবেন
- সাদুল্লাপুর গোলাপ বাগান
- জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধার বাগান
- বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি
- সন্ধ্যার ফুলের বাজার
- বিরুলিয়া ব্রিজ
- তুরাগ নদীতে নৌকা/ট্রলার ভ্রমণ
- বিরুলিয়ায় প্রাচীন বটগাছ
গোলাপ গ্রাম যাওয়ার উপযুক্ত সময়
শীতকাল গোলাপ গ্রাম যাওয়ার উপযুক্ত সময়। এসময় গোলাপের আকার বেশ বড় থাকে। এছাড়া শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘুরেও বেশ শান্তি। তবে শীতকাল ছাড়াও সারাবছর ঘুরতে যাওয়া যায়। তুরাগ নদী হয়ে গেলে নদী ভ্রমণও হয়ে যাবে।
কোথায় খাবেন
সাদুল্লাপুরে খাবার জন্য তেমন ভালো কোন হোটেল নেই।
বটতলা ঘাট এবং আকরান বাজারে সাধারন মানের কয়েকটি হোটেল আছে সেখানে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন।
এছাড়া বিকেলে চা-নাস্তা করা যায়।
বড় গ্রুপ নিয়ে গেলে আগে থেকে হোটেলে খাবারের অর্ডার দিয়ে রাখবেন।
দরকারী তথ্য (ভ্রমণ টিপস)
- দিয়াবাড়ী এবং সাদুল্লাপুর থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর লোকাল ট্রলার ছেড়ে যায়।
- গোলাপ বাগানে গিয়ে অনুমতি ব্যতীত গোলাপ ছিড়বেন না।
- গ্রামে খাবার তেমন ভালো হোটেল নেই।
- মানুষের বিরক্তি বা অসুবিধা হয় এমন কোন কাজ করবেন না।
- ফুলের বাজার সন্ধ্যায় বসে। বাজার দেখে ফিরতে হলে ট্রলার পাবেন না।
- সাদুল্লাপুর থেকে ট্রলারের শেষ ট্রিপ ৬/৬.৩০ টায় ছাড়ে (মাগরিবের আজানের উপর নির্ভরশীল)।
- ঘোরার আসল মজা পেতে হলে শীতকালে যেতে হবে। তখন ফুলের আকার অনেক বড় থাকে।
- তুরাগ নদীর রূপ দেখতে হলে যেতে হবে বর্ষায়।
কিছু কমন প্রশ্ন-উত্তর
শীতকাল। তখন গোলাপের আকার বড় থাকে এবং ফুলগুলোও বেশ সতেজ থাকে।
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে। মিরপুর হতে ট্রলারে তুরাগ নদী পাড়ি দিয়ে পানিপথে অথবা বিরুলিয়া ব্রিজ হয়ে স্থলপথে দুইভাবে যাওয়া যায়।
গোলাপের দাম প্রতিদিনই উঠানামা করে। তবে ঢাকার যেকোন স্থান থেকে এখানে অনেক কম দামে গোলাপ পাবেন এটা নিশ্চিত।
সিজন ভেদে এবং কতগুলো একসাথে কিনতেছেন তার উপর দাম নির্ভর করে। বাগান থেকে কিনলে একরকম দাম। আবার সন্ধ্যার পাইকারী মার্কেট থেকে কিনলে আরেক রকম দাম। তবে অবশ্যই শহর থেকে দাম কম। কেনার সময় দামাদামি করে নিবেন।
আমার গোলাপ গ্রাম ভ্রমণ
ফেসবুকে রবিন ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে একদিন সিদ্ধান্ত হলো গোলাপ গ্রাম ভ্রমণে বের হবো। কথামত, আমরা মিরপুর-১ বাসস্ট্যান্ডে দেখা করলাম। আমাদের হাঁটা পছন্দ হওয়ায় বাস বা রিকশা না নিয়ে গল্প করতে করতে দিয়াবাড়ি ঘাটের দিকে রওনা হলাম।
দিয়াবাড়ি ঘাট থেকে লোকাল ট্রলারে করে সাদুল্লাপুর গ্রামে। রিকশা বা অটো রিজার্ভ করে পুরো গ্রাম ঘোরা গেলেও আমরা হাঁটা দিলাম। কিছুদূর পর পরই গোলাপ বাগান। বড় বড় বেশ কয়েকটি বাগান থাকলেও ছোট ছোট বাগান অনেক। গ্রামবাসীর যার যতটুকু জায়গা রয়েছে সেখানেই চাষ করেছে। আমরাও বেশ মজা পাচ্ছিলাম। হাঁটি, গোলাপ বাগান দেখে থমকে যাই, ছবি তুলি, আবার হাঁটি।
অনেকদূর হাঁটার পর শ্যামপুর ফুলের বাজার পৌঁছে গেলাম। হাঁটতে হাঁটতে ক্ষুধাও লেগেছে বেশ। বাজারের পাশে খাবার হোটেল দেখে তাই দেরি না করে বসে পড়লাম। বিকেলের নাস্তা তখনো বানানো শুরু হয়নি। আমাদের দেখে একে একে সমুচা, পেঁয়াজু, সিঙ্গারা, পুরি সবগুলো আইটেমই অল্প অল্প করে ভেজে দিলো। স্বাদ বেশ ভালো।
খাওয়া শেষে বাজার দেখতে বের হলাম। বিকেলের দিকে বাজার তখনো জমেনি। অল্পকিছু গোলাপ আর গ্লাডিওলাস ফুল এক কোনায় জমা পড়ে আছে। বাজার জমে সন্ধ্যায়। সব চাষীরা তখন ফুল নিয়ে বাজারে আসে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারী ফুল ক্রেতারে এসে তা কিনে নিয়ে যায়।
বাজার দেখে ফিরতি পথে এক বাগানে ফুল তুলতে দেখে ভিতরে ঢুকলাম। ছবি তুলতে গেলে যে ফুল তুলছিলো একমুঠি ফুল হাতে ধরে পোজ দিলো। জিজ্ঞাসা করলাম এক মুঠিতে কয়টা গোলাপ থাকে? বললো, ৫০টা। দাম জানতে চেয়ে বেশ অবাক হলাম। দামের কোন ঠিক নেই। কোনদিন ৫০ টার দাম ৮০-১০০ টাকা হয় আবার কোনদিন ৩০০ গোলাপের দাম হয় ১০০ টাকা। এখানে দাম প্রতিদিনই উঠানামা করে।
ঘাটে গিয়ে জানলাম ট্রলার ছাড়তে দেরি হবে। কাছেই আমসত্ত্ব বিক্রি করতে দেখে কিনলাম। ঢাকার যেকোন আমসত্ত্ব থেকে কয়েকগুন বেশি ভালো স্বাদ। জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, বিক্রেতা নিজেই আমসত্ত্ব বানান। প্রতিদিন ৮ কেজি নিয়ে বের হয়। বাসায় ফিরতে ফিরতে সব শেষ হয়ে যায়।
আমসত্ব খেতে খেতেই ট্রলার ছাড়ার সময় হলো। নদীর বুকে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে আমাদের গোলাপ গ্রাম দর্শনও শেষ হলো।
ভ্রমণ শপথ
- প্রকৃতিকে ভালোবাসবো, নোংরা করবো না।
- স্থানীয় মানুষদের সম্মান করবো, বিবাদে যাবো না।
আরো পড়ুন