রাঙামাটি ও কাপ্তাই ভ্রমণ গাইড (২০২৪)

সাজেক ঘুরে লংগদু থেকে ট্রলারে চেপে পানিপথে রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো ২০১৬ সালে। ট্রলার জার্নির পুরোটা জুড়ে ছিলো স্বর্গীয় সব দৃশ্য। কাপ্তাই লেক যে এত সুন্দর, জানা ছিলো না।

চলুন জেনে নেওয়া যাক রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই ভ্রমণের বিস্তারিত সব তথ্য।

রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই ভ্রমণ প্ল্যান

  • ভ্রমণ প্ল্যান-১ (রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই)
    • রাতের বাসে রওনা হয়ে সকালে রাঙ্গামাটি পৌঁছে হোটেলে চেকইন
    • সারাদিন ট্রলারে কাপ্তাই লেক ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানো
    • রাতে রাঙ্গামাটি শহরে থাকা
    • পরদিন সিএনজি/বাসে কাপ্তাই গিয়ে কায়াকিং, ইকোপার্কে ক্যাবল রাইড, নেভি একাডেমী, কাপ্তাই বাঁধ ঘুরে দেখা
    • সন্ধ্যা/রাতে কাপ্তাই থেকে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া
  • ভ্রমণ প্ল্যান-২ (দিনে দিনে রাঙ্গামাটি)
    • রাতের বাসে রওনা হয়ে সকালে রাঙ্গামাটি পৌঁছানো
    • সারাদিন ট্রলারে কাপ্তাই লেক ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানো
    • রাতের বাসে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া
  • ভ্রমণ প্ল্যান-৩ (দিনে দিনে কাপ্তাই)
    • ঢাকা থেকে রাতের বাসে রওনা হয়ে সকালে কাপ্তাই
    • কায়াকিং ও নিজ সুবিধা মত বিভিন্ন স্পট ঘুরে বেড়ানো
    • সন্ধ্যা/রাতের বাসে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্য রওনা হওয়া
    • বি.দ্র. চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে সকালে ৩০ মিনিট পর পর কাপ্তাইয়ের বাস ছেড়ে যায়
  • ভ্রমণ প্ল্যান-৪ (হাউসবোটে রাঙ্গামাটি ঘোরা)
    • সকালে রাঙ্গামাটি পৌঁছে হাউসবোটে চেক-ইন
    • হাউবোটের প্যাকেজ অনুযায়ী ঘুরে বেড়ানো
    • যতদিন ইচ্ছা থেকে থেকে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্য রওনা হওয়া
  • ভ্রমণ প্ল্যান-৫(সাজেক থেকে পানিপথে রাঙ্গামাটি)
    • প্রথমে সাজেক চলে যাওয়া
    • সাজেকে যে কয়দিন ইচ্ছা থেকে সকালের এসকোর্টে জীপে করে লংগদু চলে আসা
    • লংগদু থেকে ট্রলারে করে রাঙ্গামাটি শহর (রিজার্ভ বাজার)
    • পরদিন ট্রলারে কাপ্তাই লেক ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানো
    • রাতের বাসে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া
রাঙ্গামাটি ভ্রমণ গাইড ও কাপ্তাই ভ্রমণ গাইড

রাঙ্গামাটি জেলার দর্শণীয় স্থান

  • শুভলং ঝর্ণা
  • শুভলং ঝর্ণার পাশেই আরেকটা ঝর্ণা(শুধু বর্ষাকালেই পানি থাকে)
  • ঝুলন্ত ব্রিজ
  • রাজবন বিহার
  • ডিসি বাংলো পার্ক
  • বৌদ্ধ মন্দির
  • বরকল উপজেলার ছোট্ট পাহাড়
  • রঙরাং পাহাড়(শুভলং বাজারের সাথে)
  • দ্বীপ রেস্টুরেন্ট (ব্যাম্বো চিকেন খাওয়ার জন্য)
  • পলওয়েল পার্ক
  • আরণ্যক রিসোর্ট

কাপ্তাই দর্শণীয় স্থান

  • কাপ্তাই বাঁধ
  • কর্ণফুলি নদী
  • শেখ রাসেল ইকো পার্ক (ক্যাবল রাইড সবসময় চালু থাকে না। থাকলে অবশ্যই চড়বেন)
  • কায়াকিং ক্লাব থেকে কায়াকিং

যাতায়াত খরচ

রাঙ্গামাটি জেলার সব দর্শনীয় স্থানে ট্রলারে যেতে হয়। ট্রলার রিজার্ভ করার সময় ওরাই বিভিন্ন স্থানের নাম বলবে। ১২-১৪ টা জায়গার নাম বলবে। সবই দ্বীপ তাই উপরে যেসব জায়গার নাম লিখেছি সেগুলো ঘুরলেই হবে।

খাগড়াছড়ি/দিঘীনালা থেকে লংগদু ঘাট, জীপ রিজার্ভ ভাড়াঃ ২০০০-৩০০০ টাকা

লংগদু থেকে রিজার্ভ বাজার(রাঙ্গামাটি শহরের একটা ঘাট) লোকাল লঞ্চ ভাড়াঃ ২০০-৩০০ টাকা
লংগদু থেকে রিজার্ভ বাজার(রাঙ্গামাটি শহরের একটা ঘাট) ট্রলার ভাড়াঃ ৩০০০-৪০০০ টাকা

রাঙ্গামাটিতে সব পর্যটন স্পট ঘুরে দেখানোর জন্য ট্রলার রিজার্ভ ভাড়াঃ ১২০০-১৮০০ টাকা

ঢাকা-রাঙ্গামাটি বাস ভাড়া – ৮৭০টাকা (নন-এসি)
ঢাকা-রাঙ্গামাটি বাস ভাড়া – ১২০০-১৭০০ টাকা (এসি)

কাপ্তাই বাস ভাড়া

ঢাকা-কাপ্তাইঃ ৮০০ টাকা (নন-এসি)

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ভাড়া পরিবর্তনশীল। তাই যখন যাবেন তখনকার ভাড়া জেনে নিবেন।

রাঙ্গামাটি হোটেল ও রিসোর্ট

রাঙ্গামাটি শহরে থাকার জন্য প্রায় অর্ধশত আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হোটেল সুফিয়া, নাদিশা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল গ্রিন ক্যাসেল, হোটেল সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল, পর্যটন মোটেল।

রিসোর্ট

  • বেরাইন্ন্যা লেক রিসোর্ট
  • আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট
  • নীলাঞ্জনা বোট ক্লাব ও রিসোর্ট
  • ফ্লোটিং বোট (প্রোমদিনীর কন্টাক নাম্বারে ফোন দিয়ে পাবেন)
  • পলওয়েল পার্ক রিসোর্ট

হাউজবোট

  • প্রমোদিনী বোট লাইফ
  • রাঙাতরী
  • স্বপ্নডিঙ্গি
  • মাউরুন

এই রিসোর্ট এবং হাউজ বোটেও থাকতে পারেন। গুগলে সার্চ করলেই কন্টাক্ট নাম্বার এবং ভাড়া পেয়ে যাবেন। ভাড়া এবং নাম্বার পরিবর্তিত হতে পারে বিধায় এখানে তা উল্লেখ করা হলো না।

খাবার

রাঙ্গামাটিতে খাবারের অনেক হোটেল রয়েছে।

ব্যাম্বো চিকেন খেতে হলে দ্বীপে যেসকল রেস্টুরেন্ট থাকে সেগুলোতে যাওয়া ভালো। ট্রলারে লেকে ঘোরার সময় দুপুরের খাবার হিসেবে ব্যাম্বো চিকেন খেতে পারেন।

পরামর্শঃ যেকোন জায়গায় খাওয়ার আগে দাম সম্পর্কে জেনে নিবেন।

কাপ্তাইয়ে, জুম রেস্তোরা, ফ্লোটিং প্যারাডাইস রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। প্যারাডাইস রেস্টুরেন্টের খাবার বেশ ভালো। রেস্টুরেন্ট থেকে লেকের ভিউ অসাধারন।

সাজেক থেকে পানিপথে রাঙ্গামাটি যাওয়ার উপায়

আপনি যেই জীপে সাজেক যাবেন সেই জীপ ড্রাইভারকে বলে রাখলে সেই আপনাকে লংগদু ঘাটে নিয়ে যাবে। (সাজেক ভ্রমণের বিস্তারিত জানতে সাজেক ভ্রমণ গাইড পড়তে পারেন)

লংগদু ঘাটে অনেক ট্রলার থাকে। রিজার্ভ না করে গেলেও হয়, তবু নিশ্চিন্তে থাকতে চাইলে আগে থেকে রিজার্ভ করতে পারেন। এই ব্যাপারে জীপ ড্রাইভার আপনাকে সাহায্য করতে পারে। ট্রলার ভাড়া আগেও জেনে নিবেন।

লঞ্চের সময়সূচি

  • রাঙ্গামাটি (রিজার্ভ বাজার) থেকে লংগদু-মারিশ্যা (বাঘাইছড়ি)
    • সকাল ৭.৩০ টা
    • সকাল ১০ টা
    • দুপুর ১২ টা
    • দুপুর ২.৩০ টা
  • মারিশ্যা (বাঘাইছড়ি) থেকে লংগদু হয়ে রাঙ্গামাটি (রিজার্ভ বাজার)
    • সকাল ৭টা
    • সকাল ৮টা
  • লংগদু হতে রাঙ্গামাটি (রিজার্ভ বাজার)
    • সকাল ৭ টা
    • সকাল ৮.৩০ টা
    • দুপুর ১ টা

রাঙ্গামাটি (রিজার্ভ বাজার) থেকে লংগদু লঞ্চে যেতে সময় লাগে ৩-৪ ঘন্টা।

লংগদু পর্যন্ত ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা। বর্তমান ভাড়া যখন যাবেন ঘাট থেকে জেনে নিবেন।

পরামর্শঃ লঞ্চের দোতলায় সিট পেতে লঞ্চ ছাড়ার বেশ আগে যাবেন।

কিছু জরুরী পরামর্শ

  • কাপ্তাই লেকের পানিতে অবশ্যই অপচনশীল কোন দ্রব্যাদি ফেলবেন না। যেমনঃ চিপস,চানাচুরের প্যাকেট। সিগারেটের শেষ অংশ ইত্যাদি।
  • ট্রলার ভাড়া করার সময় দামাদামি করবেন। ওরা অনেক জায়গার কথা বলে ভাড়া বাড়ানোর চেষ্টা করবে। পাত্তা দিবেন না।
  • সব জায়গায় যেন ঘুরিয়ে দেখায় সেটা লক্ষ্য রাখবেন। অনেক সময় ট্রলারওয়ালা সব জায়গা না ঘুরিয়েই ঘাটে নিয়ে আসে।
  • সিএনজিতে কোন ব্যাগ বা মূল্যবান কিছু ভুলে ফেলে আসলে সাথে সাথে ইউনিক বাস কাউন্টার/হোটেল নাদিশার সামনে সিএনজি সমিতি আছে সেখানে জানাবেন। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিবে। আমাদের একজনের ব্যাগ ফেলে আসছিলো সিএনজিতে। সমিতিতে জানানোর পর কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যাগ খুজে পাওয়া যায়।
  • রাঙ্গামাটি গেলে অবশ্যই ব্যাম্বো চিকেন খাবেন।
  • রঙরাং পাহাড়ে উঠার জন্য আর্মি অনুমতি নিতে হয় সুবলং বাজার থেকে।

আরো পড়ুন

শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দিন

Similar Posts

Leave a Reply