এক সন্ধ্যায় জামগড়া বাজার

শীত চলে আসার পর সোলো ট্যুর দেওয়ার জন্য মন আরো বেশি করে তাগাদা দেওয়া শুরু করলো। কনকনে শীতের রাতে বাসে বা ট্রেনে করে দূরে কোথাও যাবো। শীতে দাঁত কাপাকাপি অবস্থা হবে। লম্বা জার্নিতে ঘুমিয়ে পড়বো। ঘুমের মধ্যেও শীতভাব টের পাবো। মোটকথা শীত উপভোগ করবো।

আজকে সকালের প্ল্যান ছিলো কেরানীগঞ্জে সরিষা ক্ষেত দেখতে যাবো কিন্তু দুপুর ২টায় ঘুম থেকে উঠার পর সেই প্ল্যান আশংকার মধ্যে পরে যায়। এরপর টুকটাক কাজ করে বের হতে হতে যখন ৪.৩০টার বেশি বেজে যায় তখনই কেরানীগঞ্জ যাওয়ার প্ল্যান ভেস্তে যায়। বের তো হয়ে পড়েছি এখন তাহলে কই যাওয়া যায়!

মিরপুর-১ নাম্বারে হাঁটাহাঁটি করতে করতে চিন্তা করতেছিলাম। এরমধ্যেই মাথায় আসে মিরপুর বেড়িবাঁধ রোড হয়ে বেশ কয়েকটা বাস চন্দ্রা যায়, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি তাহলে সেদিকেই যাওয়া যাক।

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের অপজিট থেকে মোহনা বাসে উঠে পড়ি। বাস হেল্পারকে জিজ্জাসা করে জানলাম বাস চন্দ্রা পর্যন্ত যাবে না, ঠিক করলাম ফ্যান্টাসি কিংডম পর্যন্ত যাবো।

খালি বাস অল্প সময়ের মধ্যে ভরে গেল। সিটিং বাস সার্ভিস নামক লোকাল বাস চলা শুরু করলো। বেড়িবাঁধ রোডে উঠার পরই গায়ে বাতাস লাগা শুরু করলো। শীতের বাতাস; যে বাতাস গায়ে লাগানোর জন্য মনের এত আর্তনাদ। গেঞ্জির উপর হুডি পড়া তাতেও বেশ ঠান্ডা লাগছিলো। মজাই পাচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই বিপত্তি। সামনে এক্সিডেন্ট হয়েছে, পুরো রোডে জ্যাম লেগে গেছে। কোথায় ভাবলাম বেড়িবাঁধের জ্যামহীন ফাঁকা রাস্তা সাঁই সাঁই করে বাস চলবে তা আর হলো না।

জ্যাম পার হতে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট লেগে গেল। এক্সিডেন্ট করা যানবাহন দুটো দেখলাম। খাবারবাহী পিকআপ আর এমবুল্যান্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ। দুইটা যানবাহনের সামনের পার্ট দুমড়ে মুচড়ে গেছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে যা বুঝলাম পিকআপের ভিতর চালক আটকা পড়ে আছে। মানুষজন চালককে বের করার চেষ্টা করতেছে। চালক বেঁচে আছে কিনা সেটা অবশ্য জানতে পারি নাই। আশুলিয়ার এই রোডটা আমি এমনিতেও বেশ ভয় পাই। এই রোডে প্রতিনিয়তই এক্সিডেন্ট হয়ে থাকে। কয়েক বছর আগে এক বন্ধুর গাড়িতে করে এই রোড দিয়ে যাওয়ার সময় জীবনের প্রথম “Near Death Experience” হয়েছিলো।

জ্যাম পার হওয়ার পর বাস আবার জোরে টানা শুরু করলো। জ্যামের মধ্যে তন্দ্রাভাব চলে আসলেও বাস চলা শুরু করায় আবার সজাগ হয়ে গেলাম। আশেপাশের সবকিছু লক্ষ্য করা শুরু করলাম। মজার মজার সব জায়গার নাম।

জিরাবো বাজার। বেশ জমজমাট একটা বাজার। জিরাবো বাজার থেকে একটু সামনে এগুতেই নিশ্চিন্তপুর। এখানকার মানুষজন বোধহয় সবসময় নিশ্চিন্ত থাকে। তবে রাস্তার ব্যস্ততা দেখে সেরকম কিছু মনে হলো না। নিশ্চিন্তপুরের পরেই নরসিংহপুর। এখানে হয়তো নর সিংহদের বসবাস ছিলো। অন্য কোন সময় গিয়ে এই নামের রহস্য বের করতে হবে। এরপরেই বেরন। এটা কেমন নাম সেটা বুঝি নাই। যাই হোক বেরন পার হয়েই জামগড়া। এইখানে মনে হয় অনেক জাম গাছ ছিলো আগে। এখন তো বড় বড় বিল্ডিং এ ভরা। আমি নামবো জামগড়ে। জামগড়েই ফ্যান্টাসি কিংডম। যদিও আমার ইচ্ছা ছিলো বাসের শেষ স্টপেজ পর্যন্ত যাওয়া কিন্তু জামগড়া বাজার কোন কারনে বাসে বসেই পছন্দ হয়ে যাওয়ায় নেমে পড়লাম।

জামগড়া বাজার ঘুরলাম বেশ কিছুক্ষন। বেশ ব্যস্ত একটা বাজার। সবকিছুই পাওয়া যায়। বাজার ঘুরতে ঘুরতে এরপর চলে গেলাম ভিতরের দিকে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর যাওয়ার পর যেখানে আর ইলেক্ট্রিক বাতি নেই সেখানে থেমে গেলাম। রাত ৮টার দিকে অন্ধকারে অপরিচিত কোন এলাকায় ঢুকতে ইচ্ছা করলো না। আবার হেঁটে প্রধান রাস্তায় চলে আসলাম।

প্রধান রাস্তায় ফিলিং স্টেশনের পাশের একটা চায়ের দোকান পছন্দ হলো। ব্যস্ত রাস্তার পাশের টং দোকান। চা খেতে খেতে গাড়ি দেখা যাবে এই ভেবে দোকানে বসলাম। দোকানে দেখলাম একটা টিভি আছে সেখানে কেরালা-কোলকাতার ফুটবল খেলা চলতেছে। দোকানদার মামা কেরালার সাপোর্টার। কেরালা গোল দিতেই তার সে কি উচ্ছাস! অল্প কিছুক্ষনের ব্যবধানে কোলকাতাও ফিরতি গোল দেওয়ায় তার উচ্ছাস কমে গেল। যাই হোক, সচরাচর আমি চা খাই না তবু দোকানে বসবো ভেবে রং চায়ের অর্ডার দিলাম। কড়া লিকারের চা খেতে খুব একটা খারাপ লাগলো না। চা খেতে খেতে দোকানদার মামার কাহিনী আর একটু পর পর ভারী ভারী বাস, ট্রাকের চলাচল দেখতে খারাপ লাগছিলো না। মনে হচ্ছিলো ঢাকা থেকে অনেকদূরে কোন এক হাইওয়ে রাস্তার পাশের টং দোকানে বসে আছি।

টং দোকানটা আমার বেশ পছন্দ হলো। আবার সময় করে দোকানটাতে আসবো এই বাসনা মনে নিয়ে উঠে পড়লাম। রাত বেশ হয়েছে এবার বাড়ি ফেরা যাক। রাস্তার পাশে দাঁড়াতেই কিছুক্ষনের মধ্যে মোহনা বাস চলে আসলো। আমিও চড়ে বসলাম। এবারের চালকটা মারাত্মক। কাউকে সাইড দিতে চায় না, টানেও অনেক জোরে। পুরো বাস নাড়িয়েই চালাচ্ছিলো। এমন ড্রাইভার আমার অনেক বেশি পছন্দ(যদিও অনেক রিস্কি) সাথে শীতের ঠান্ডা বাতাস, ঘুম চলে আসলো। নিশ্চিন্তপুরে ঘুম দিয়ে ঘুম থেকে উঠে দেখি বিরুলিয়া চলে আসছি। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই মিরপুর-১ চলে আসলাম। বাস থেকে নামার সময় মন জুড়ে ছিলো তৃপ্তি।

বিকাল ৪.৩০ টা থেকে রাত ৯.১৫ টার ছোট্ট একটা ট্রিপ। কিন্তু শীত নিয়ে আমার মন বাসনার প্রায় সবটুকুই পূরন করতে সক্ষম হয়েছে ট্রিপটা।

রোজ রবিবার
১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

Never lose hope, never stop travelling

ভ্রমণ শপথ

  • প্রকৃতিকে ভালোবাসবো, নোংরা করবো না।
  • স্থানীয় মানুষদের সম্মান করবো, বিবাদে যাবো না।

আমার লেখা ই-বুক কিনতে এখানে ক্লিক করুন

শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দিন

Similar Posts