লালাখাল ভ্রমণ গাইড (খরচ, থাকা, খাওয়া, যাতায়াত সব তথ্য)
লালাখাল (Lalakhal) সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার একটি উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ স্থান। লালাখালের পানির রঙের জন্য ভ্রমণপিপাসু মানুষদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
পানি কোথাও নীল, কোথাও নীলচে সবুজ আবার কোথাও আকাশী নীল। তবে এই নীল রঙ দেখতে হলে যেতে হবে শীতকালে (ডিসেম্বর থেকে মার্চ)।
বর্ষায় পানি ঘোলা থাকায় দেখার মত কিছু থাকে না। নীল পানি ছাড়াও নদীর দুইপাশে পাহাড়ি বন, চা-বাগান এবং নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি লালাখাল ভ্রমণকে আনন্দময় করে তোলে।
সারিঘাট থেকে লালাখাল জিরো পয়েন্টের দূরত্ব বেশি নয়। পায়ে হেঁটে বা ট্রলার দুইভাবেই জিরো পয়েন্ট যাওয়া যায়। পর্যটকরা সাধারনত জিরো পয়েন্টে পানিতে নেমে থাকে।
আজকের পোস্টে লালাখাল ভ্রমণ সম্পর্কে সব তথ্য আমরা জানবো।
লালাখালের পানি নীল কেনো
লালাখানের অবস্থান ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচে। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে আসা প্রবাহমান পানির সাথে মিশে থাকা খনিজ এবং নদীর তলদেশ কাদার পরিবর্তে বালুময় হওয়ার কারনে পানির রঙ নীল দেখায়।
কমন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
শীতকাল। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। তখন লালাখালের পানি নীল থাকে। বর্ষায় নদীর পানি ঘোলা হয়ে যায়।
লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে জাফলং যাওয়ার পথে সারিঘাট বাজার থেকে লালাখাল যাওয়া যায়।
সিলেট শহর থেকে লালাখাল ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
স্বচ্ছ নীল পানির জন্য।
লালাখাল কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সিলেট
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন, প্লেন করে সিলেট আসতে পারবেন।
- বাস
- সায়েদাবাদ, গাবতলী থেকে সিলেটগামী বাস ছেড়ে যায়।
- নন-এসি বাসঃ ইউনিক, এনা, হানিফ, শ্যামলী ইত্যাদি। ভাড়া – ৪৮০ টাকা
- এসি বাসঃ গ্রিন লাইন, লন্ডন এক্সপ্রেস, শ্যামলী ইত্যাদি। ভাড়া – ৮০০-১৬০০ টাকা
- প্লেন
- বিমান বাংলাদেশ, নভো-এয়ার, ইউএস বাংলা প্লেন ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সিলেট যায়
- প্লেনের ভাড়া আনুমানিক ২৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে
- ট্রেন
- উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত, কালনী ট্রেন ঢাকা কমলাপুর বা বিমান বন্দর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায়
সিটের নাম | ভাড়া |
---|---|
শোভন চেয়ার | ৩৮০ টাকা |
প্রথম চেয়ার/সিট | ৪৪৫ টাকা |
স্নিগ্ধা | ৬৩০ টাকা |
এসি সিট | ৭৫৬ টাকা |
এসি বার্থ | ১১৬৯ টাকা |
চট্টগ্রাম থেকে সিলেট
চট্টগ্রাম থেকে বাস, ট্রেন, প্লেন করে সিলেট আসতে পারবেন।
- বাস
- দামপাড়া, কর্ণেল হাট থেকে সিলেটগামী বাস ছেড়ে যায়।
- নন-এসি বাসঃ এনা, সৌদিয়া, মামুন ইত্যাদি। ভাড়া – ৭০০ টাকা
- এসি বাসঃ গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, লন্ডন এক্সপ্রেস ইত্যাদি। ভাড়া – ৯০০-১২০০ টাকা
- প্লেন
- বিমান বাংলাদেশ, নভো-এয়ার, ইউএস বাংলা
- প্লেনের ভাড়া আনুমানিক ৫০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে
- ট্রেন
- উদয়ন, পাহাড়িকা ট্রেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায়
সিটের নাম | ভাড়া |
---|---|
শোভন চেয়ার | ৩৯৫ টাকা |
স্নিগ্ধা | ৭৩৯ টাকা |
এসি সিট | ৮৭৭ টাকা |
এসি বার্থ | ১৩৫৮ টাকা |
সিলেট থেকে লালাখাল
সিলেট শহরের সোবহানী ঘাট/টিলাগড় থেকে জাফলংগামী বাস/লেগুনায় উঠে সারিঘাট বাজার নামবেন। ভাড়া নিবে ৪০-৬০ টাকা।
সারিঘাট বাজার থেকে লালাখাল ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্রলার রিজার্ভ করতে পারবেন। ঘন্টা প্রতি ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা নিবে। কয়েকঘন্টার জন্য ঘুরলে খরচ কিছুটা কম হবে।
ট্রলার করে ঘুরলে লালাখাল চা বাগান, সুপারী বাগান, আফিফা চা বাগান, লালাখাল জিরো পয়েন্ট সব ঘুরিয়ে দেখাবে। সবগুলো ঘুরে দেখতে ৩ ঘন্টার বেশি সময় লেগে যাবে।
কম খরচে ট্রলার রিজার্ভ করতে
সারিঘাট বাজার থেকে ট্রলার রিজার্ভ না করে কম খরচে ট্রলারে রিজার্ভ করতে হলে সারি নদীর ব্রিজ পার হয়ে আরো সামনে গেলে ডানপাশে লালাখাল অটোস্ট্যান্ড পাবেন।
লোকাল অটোতে করে লালাখাল।লোকাল ভাড়া নিবে ১৫ টাকা।
এখানে ট্রলার ভাড়া তুলনামূলক অনেক কম হবে। ছাউনি ছাড়া নৌকাতে ভাড়া হবে সবচেয়ে কম। দামাদামি করে ২০০-৩০০ টাকাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারবেন।
লালাখাল চা বাগান, সুপারী বাগান, আফিফা চা বাগান, লালাখাল জিরো পয়েন্ট সব ঘুরিয়ে দেখাবে।
পায়ে হেঁটে লালাখাল
সিলেট শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে সোবহানী ঘাট/টিলাগড়।
সেখান থেকে বাস/লেগুনাতে করে সারিঘাট বাজার।
সারিঘাট বাজার থেকে একটু সামনে এগিয়ে সারি নদীর ব্রিজ।
ব্রিজ পার হয়ে আরো কিছুদূর এগুলেই হাতের ডানে লালাখাল অটোস্ট্যান্ড।
লোকাল অটোতে করে লালাখাল। লালাখাল থেকে ৫ টাকা দিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে লালাখাল চা বাগান।
লালাখাল চা বাগান থেকে বাগানের ভিতর দিয়ে হেঁটে লালাখাল জিরো পয়েন্ট যাওয়া যায় আবার নদীর পাশ দিয়ে হেঁটেও যাওয়া যায়।
আমার পায়ে হেঁটে লালাখাল ভ্রমণ গল্প পড়ে দেখতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
লালাখাল ঘুরে সাধারনত সবাই জাফলং যায় অথবা জাফলং ঘুরে সিলেট শহরে আসার পথে লালাখাল দেখে যায়। রাতে থাকার জন্য সিলেট শহরে চলে আসবেন। শহরের কদমতলী, দরগা রোডে অনেক হোটেল পাবেন।
কি খাবেন
লালাখালের আশেপাশে খাবার তেমন ভালো কোন হোটেল নেই।
খাবার জন্য সিলেট শহরে চলে আসবেন। শহরের বিখ্যাত পাঁচ ভাই, পানসী, পালকি রেস্টুরেন্টে পছন্দ অনুযায়ী খাবার খেতে পারবেন।
সিলেট ঘুরতে গেলে পর্যটকরা পাঁচ ভাই এবং পানসী রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন প্রকারের ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে থাকেন।
এছাড়া পাঁচ ভাই হোটেলের কালাভুনা বেশ বিখ্যাত। এসব রেস্টুরেন্টের বাহারী পদের ভর্তা এবং খাবারের জন্য সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়।
এছাড়াও চাইলে নিজের পছন্দমত অন্য রেস্টুরেন্টেও খাবার খেতে পারেন।
আনুমানিক ভ্রমণ খরচ
- ঢাকা-সিলেট নন-এসি বাসঃ ৪৮০ টাকা
- টিলাগড় থেকে সারিঘাট, লেগুনা/বাসঃ ৪০-৬০ টাকা
- লালাখাল অটোস্ট্যান্ড থেকে লালাখাল, অটোঃ ১৫ টাকা
- ট্রলার রিজার্ভ ঘন্টা প্রতিঃ ৩০০-১০০০ টাকা
- সিলেট-ঢাকা নন-এসি বাসঃ ৪৮০ টাকা
- ১৫০০-২০০০ টাকার ভিতর ঢাকা থেকে নন-এসি বাসে লালাখাল ঘুরে আসা সম্ভব। কয়জন যাচ্ছেন, কিভাবে যাচ্ছেন তার উপর খরচ নির্ভর করবে।
পায়ে হেঁটে লালাখাল ভ্রমণে খরচ
- টিলাগড় থেকে সারিঘাট, লেগুনা/বাসঃ ৪০-৬০ টাকা
- লালাখাল অটোস্ট্যান্ড থেকে লালাখাল, অটোঃ ১৫ টাকা
- নৌকা পারাপারঃ ৫ টাকা
- ট্রলার না নেওয়ায় ট্রলারের খরচ বেঁচে যাবে। এছাড়া বাস/খাবার কিভাবে যাবেন, খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে।
ভ্রমণ টিপস
- পায়ে হেঁটে ঘুরলে কষ্ট হয়ত একটু বেশি তবে নিজের ইচ্ছে মত পুরোটা ঘুরে দেখা যায়। এখানে বুদ্ধিটা হচ্ছে মানুষ বেশি না হলে(১-৩ জন) জিরো পয়েন্ট থেকে কোন ট্রলার মাঝি/ভ্রমণ গ্রুপকে পটিয়ে আসার সময় ট্রলারে করে আসা।
- সারিঘাট থেকে ৭০০-১০০০ টাকার ট্রলার রিজার্ভ করার আসলে দরকার নেই। ৩০ মিনিটের পথের জন্য ভাড়া অনেক বেশি। চেষ্টা করবেন লোকাল অটোতে করে লালাখাল গিয়ে এরপর ট্রলার/নৌকা রিজার্ভ করতে।
- পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ানোতে যেমন মজা তেমনি নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর আরেক মজা। দুটোতে দুইরকম আনন্দ।
- সকালে জাফলং বা বিছানাকান্দি/রাতারগুল ঘুরে বিকালে লালাখাল ঘুরতে পারেন। শুধু লালাখাল ঘুরে দেখার জন্য পুরো দিনের প্রয়োজন হয় না।
ভ্রমণ শপথ
- প্রকৃতিকে ভালোবাসবো, নোংরা করবো না।
- স্থানীয় মানুষদের সম্মান করবো, বিবাদে যাবো না।
আরো পড়ুন
Feature Image by Oronno Dhrubo