সিএসই ডিপার্টমেন্টাল ট্যুরে রাঙ্গামাটি – ভ্রমণের স্মৃতিকথা (পর্ব-৪.৩)
আজ রাতের বাসে আমরা ঢাকা রওনা হবো। গতকাল রাতে স্যার বলেছিলো, সকাল সকাল উঠে যেন সবাইকে ঘুম থেকে উঠাই। বাকিদের ঘুম থেকে উঠাবো কি আমি নিজেই ঘুমাতে গেছি ভোরবেলা।
আনিস স্যার ফোনে আমাকে না পেয়ে বাকিদের নাস্তা খেতে যেতে বলেন। আমি যখন স্যারকে ফোন দিলাম বললেন, ব্যাগ গুছিয়ে নাস্তা করতে আসো। আমার তখনো ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, ভাবলাম আরেকটু ঘুমিয়ে নেই। কিন্তু ঘুম কি আর আসে!
আনিস স্যার আমাদের রুমের সবাই বের হইছি কিনা দেখতে এসে দেখে আমরা এখনো কেউ ফ্রেশ হই নাই, আড্ডা দিতেছি। স্যারকে দেখে তাড়াতাড়ি নিচে নামলাম। খিচুড়ী দিয়ে সবাই ততক্ষনে নাস্তা করা শুরু করে দিয়েছে। নাস্তা শেষে বাসে উঠে পড়লাম, আজ যাবো কাপ্তাই।
কাপ্তাই যাবার পথে একটা ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে তাই আমাদের দুইটা বাস রিজার্ভ করতে হয়। একটা ব্রিজ পর্যন্ত নিয়ে যাবে এরপর হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে আরেকটা বাসে উঠতে হবে।
বাসে উঠেও আমার ঘুম কাটে না। কেউ যাতে না বুঝে সেজন্য সানগ্লাস পড়ে ঘুমানোর ট্রাই করতেছি তখন আনিস স্যার বলে ঠিকমত বসে ঘুমাও নাহলে পড়ে যাবা। সানগ্লাসের ভিতর দিয়ে চোখ দেখা যায় বুঝতে পেরে ঘুমানোর সেখানেই সম্পাতি।
মিনিট বিশের মধ্যেই আমরা ভাঙ্গা ব্রিজের কাছে চলে যাই। ব্রিজ পার হয়ে অন্য বাসে উঠি। বাস প্রথমে থামে জল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। কিন্তু অনুমতি না থাকায় আমরা ভিতরে ঢুকতে পারি নাই। ড্যাম দেখার জন্য আমরা তখন সেখান থেকে আরেকটু দূরে যাই। সেখানে আনারস আর ডাব দেখে সবাই বাস থেকে নেমে পড়ি। শুরু হয় আনারস খাওয়ার প্রতিযোগিতা। ডাবের সংখ্যা কম থাকায় সবাই পায় না। অবশ্য ডাবের অভাব আনারস দিয়ে পূরন করে নেয়।
আমাদের প্রধান লক্ষ্য ইকোপার্কে যাওয়ার পথে একটা সুন্দর জায়গা দেখে আমরা আবার নেমে পড়ি। পিচঢালা ঢালু এক পথ নেমে গেছে একেবারে লেকের কাছের। প্রথমে আমরা কয়েকজন লেকের পাড়ে যাই। বাকিরা তখনও রাস্তার উপর থেকেই লেক দেখতেছিলো। পরে আমাদের ডাকাডাকিতে নিচে নেমে আসে।
বাঁধের গেট দেখা যাচ্ছিলো। সবাই ছবি তুলে উপরে আসবো তখন আবার প্রতিযোগিতা কে সবার আগে উঠতে পারে। আমরা কয়েকজন এক দৌড়ে উপরে চলে আসলাম। রাঙ্গামাটি শহরটা আসলেই অনেক বেশি সুন্দর। পাহাড়ের সাথে লেক মিশে শহরটার সৌন্দর্য আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমার লেখা ই-বুক কিনতে এখানে ক্লিক করুন
ইকোপার্কে আসার পর জানা গেলো ক্যাবল কার পরিচালনাকারী দুপুরের খাবার খেতে গেছেন। আমাদের ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হবে। আমি এখানে আসার প্ল্যান করি ক্যাবল কারে চড়ার জন্য।
পার্কে প্রবেশের জন্য টিকেট কাটাতেছি সে সময় সময় রাহাত ভাই পার্কের গেটের সামনে রুমাল বিছিয়ে বসে পড়ে। যদি কিছু উপার্জন করা যায়। কিন্তু বিধিবাম ১ টাকার একটা কয়েন ছাড়া আর কিছুই সে পায় নি।
পার্কের পুরো নাম, শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্ক। প্রচন্ড রোদ থাকা সত্ত্বেও সবাই পার্ক ঘুরতে বেড়িয়ে পড়ি। আমরা কয়েকজন দোলনা দেখে সেখানেই থেমে যাই। পুরো পার্ক দেখার জন্য ক্যাবল কারে তো উঠবোই শুধু শুধু গরমে হেঁটে বেড়ানোর চেয়ে দোলনায় দোল খাওয়া ভালো।
দোলনা একটা কিন্তু মানুষ আমরা প্রায় ১২-১৫ জন। শুরু হয় কে আগে দোলনা দখল করতে পারে তার প্রতিযোগিতা। আবার দুইজন বসার পর বেশিক্ষন বসে থাকতেও দেওয়া যাবে না। এরপর শুরু হয় দোলনা কত উঁচুতে উঠানো যায় সে খেলা। দোলনা উঁচুতে উঠানোর খেলায় আপন বেশ ভয় পেলো। বার বার বলতেছে, “দোলনা থামা, দোলনা থামা।” এই খেলা শুরু হওয়ার পর আর কেউ দোলনায় উঠে না।
আমি আনিস স্যারকে জোড় করে নিয়ে দোলনায় বসলাম। আমাদেরকেও উঁচুতে উঠানো হলো। কিন্ত সাহসী আমরা কোন ভয়ই পাই নি। দোলনায় বসে অনেক ছবি তোলা হলো।
ক্যাবল কারে উঠার নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। পরিচালনাকারী আসার পর ছয়জন করে একটা কারে উঠে বসলাম। আমি অনেক হিসাব করে বসার পরও ক্যাবল কার উপরে উঠা দেখতে পারলাম না।
ক্যাবল কার ১.১৫ কিলোমিটার লম্বা। আপ-ডাউন ২.৫ কিলোমিটার। কারে উঠার পর এটি অন্যপ্রান্তে একটা টিলার মত জায়গায় থামে। সেখান থেকে পার্কের অনেকাংশ দেখা যায়। আমরা সেখানে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে আবার কারে উঠে বসি।
ক্যাবল কারে থেকে নিচে দেখতে বেশ মজা লাগলেও অনেকের উচ্চতাভীতি থাকায় তারা বেশ ভয় পেয়েছিলো। তাদের জন্য ক্যাবল কার জার্নিটা মোটেও সুখকর ছিলো না। কিন্তু সবার জন্যই এটা অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা ছিলো।
ক্যাবল কারে চড়া শেষ। এখন দুপুরের খাবার খেয়ে ফিরতি পথ ধরতে হবে। প্যারাডাইজ হোটেলে আগেই খাবার অর্ডার করে যাওয়া হয়েছিলো। ক্ষুধার্ত সবাই হোটেলে নেমেই খেতে বসে পড়ি। হোটেল থেকে লেকের দৃশ্য অসাধারন। জানালার পাশে বসে বড় বড় গলদা চিংড়ি দিয়ে খাবার খেতে আর লেকের দৃশ্য দেখতে অসাধারনই লাগছিলো।
তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে পানির বোতল নিয়ে হোটেলের বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসলাম। শান্ত, চুপচাপ লেকের দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলে ভ্রম হয়। মনে হয় এখানেই কোথাও টিলার উপর বাসা বানিয়ে থেকে যাই। কি হবে, ইট পাথরের শহরটায় আবার ফিরে গিয়ে!
খাবার শেষে এবার হোটেলে ফেরার পালা। যারা গতকাল শপিং করে নি তারা শপিং করবে। যারা শহর ঘুরে দেখে নাই, তারা শহর ঘুরবে। আর আমি ঘুমাবো। যতটুকু সময় পারা যায় ঘুমাবো।
বেশ কিছু সময় ঘুমানোর পর ব্যাগ গুছানোর কথা মনে হতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। এছাড়াও আরো অনেক কাজ বাকি। ব্যাগ গুছিয়ে নিচে নামলাম। কিছু শপিং করা বাকি ছিলো শপিং করলাম।
গতরাতের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে কিছু গিফট দেওয়া হবে। কিছু গিফট কিনলাম। রাঙ্গামাটি থেকে সব বাস রাত ৯ টার মধ্যে ছেড়ে চলে যায় কিন্তু রাতের খাবার খেয়ে আমাদের বাসে উঠতে উঠতে ১১ টা বেজে গেল।
বাসে উঠে স্যাররা ট্যুর নিয়ে বেশ কিছু কথা বললো। এরপর পুরস্কার বিতরনী হলো। ইচ্ছা ছিলো আজ রাতেও কাউকে ঘুমাতে দিবো না। এই জার্নির পরই তো ট্যুর শেষ। কিন্তু সবার ক্লান্ত ভাব দেখে আর বিরক্ত করলাম না। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। সমাপ্তি ঘটলো দুই রাত, তিন দিনের অসাধারন এক ট্যুরের…
প্রথম পর্বঃ সিএসই ডিপার্টমেন্টাল ট্যুরে রাঙ্গামাটি (পর্ব-৪.১)
দ্বিতীয় পর্বঃ সিএসই ডিপার্টমেন্টাল ট্যুরে রাঙ্গামাটি (পর্ব-৪.২)