কক্সবাজার ভ্রমণ গাইড (২০২৪)
কক্সবাজার – সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ দেশী ও বিদেশী পর্যটক সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য কক্সবাজার ভ্রমণ করতে আসে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কক্সবাজার ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য।
কক্সবাজার যাওয়ার উপায়
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি বাসে কক্সবাজার যাওয়া যায়। এছাড়া ট্রেন এবং বিমানেও কক্সবাজার যাওয়া যায়।
ঢাকা টু কক্সবাজার বাস
ঢাকা থেকে অনেক বাস কক্সবাজার যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ইউনিক, সোহাগ, সেন্টমার্টিন পরিবহন, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, হানিফ, শ্যামলী, রিলাক্স ইত্যাদি। ঢাকা থেকে বাসে কক্সবাজার যেতে ৮-১০ ঘণ্টা সময় লাগে।
কোম্পানি ভেদে, নন এসি বাস ভাড়া ৯০০-১৪০০ টাকা। এসি বাস ভাড়া ১০০০-২৫০০ টাকা।
চট্টগ্রাম টু কক্সবাজার বাস
চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এদের মধ্যে মারসা বাসের সার্ভিস বেশ ভালো। এছাড়া শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক সহ অন্যান্য কোম্পানির বাস চলে।
কোম্পানি ভেদে, নন এসি বাস ভাড়া ২৫০-৪২০ টাকা।
বরিশাল টু কক্সবাজার বাস
বরিশাল থেকে বেশ কয়েকটি কোম্পানি সরাসরি কক্সবাজার বাস সার্ভিস দিয়ে থাকে। সাকুরা, টাইমস ট্রাভেল, সৌদিয়া ইত্যাদি।
বাস ভাড়া নন এসি ১৫০০ টাকা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য দুইটি প্রধান রুট রয়েছে:
- সরাসরি ট্রেনের মাধ্যমে: ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস অথবা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে সরাসরি কক্সবাজার।
- চট্টগ্রাম হয়ে: প্রথমে ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম। কমলাপুর বা বিমানবন্দর থেকে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী বা চট্টলা মেইল ট্রেন চট্টগ্রাম যায়। ট্রেনের ভাড়া ৩৪০ থেকে ১৩৯৮ টাকা। চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর, নতুন ব্রিজ এলাকা বা দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন ধরনের বাসে (এস আলম, হানিফ, ইউনিক) কক্সবাজার। এছাড়া, চট্টগ্রাম থেকে রিজার্ভ মাইক্রোবাসেও কক্সবাজার যাওয়া সম্ভব।
ঢাকা থেকে বিমানে কক্সবাজার
ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বিমানে যেতে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। বিমানগুলো ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছাড়ে।
কক্সবাজার হোটেল ও রিসোর্ট
বর্তমানে কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে প্রায় ১.৫ লাখ মানুষের থাকার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। তাই বুকিং না করেও গেলে হোটেল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে শীতের শেষ, বছরের শুরুতে (পিক সিজনে) অথবা টানা ছুটির সময় অগ্রীম বুকিং দিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
সাধারণ বাজেট অনুযায়ী কক্সবাজারের হোটেল/রিসোর্টগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়:
হোটেল ও রিসোর্টের ধরন | হোটেল ও রিসোর্টের নাম | ভাড়া |
লাক্সারি (বিলাসবহুল) | মেরমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়ামান বিচ রিসোর্ট, লং বিচ হোটেল, ওশ্যান প্যারাডাইস হোটেল ইত্যাদি | ৬০০০-৩০০০০ |
মিড-রেঞ্জ (মাঝারি বাজেট) | হোটেল সী ক্রাউন, সী প্যালেস, বিচ ভিউ ইত্যাদি | ৩০০০-৬০০০ |
বাজেট (সাশ্রয়ী) | উর্মি গেস্ট হাউজ, কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, কল্লোল ইত্যাদি | ৫০০-৩০০০ |
কক্সবাজারে কম দামে হোটেল পেতে হলে আগে থেকে খোঁজ নেওয়া ভালো। অফসিজনে হোটেল ভাড়া সাধারণত অর্ধেকেরও কম হয়। সরাসরি কক্সবাজারে পৌঁছে দরদাম করে হোটেল বুক করলে অনেক কমে পাওয়া যাবে। বিশেষ করে কলাতলি বিচ থেকে একটু দূরে লং বিচ হোটেলের উল্টো দিকে গলির ভিতরের হোটেলগুলোতে। মূল বিচ এবং রোড থেকে দূরে থাকা হোটেলগুলোর ভাড়া কম হয়ে থাকে।
তবে রিকশা বা সিএনজিচালকদের পরামর্শে হোটেল না খুঁজে, হোটেলের ফেসবুক পেইজ বা ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করাই ভালো।
স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া যেতে পারে, যেখানে এসি/নন এসি সহ ২-৪ বেডরুম এবং রান্নাঘর থাকে। এর ভাড়া দৈনিক ২,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
কক্সবাজার কোথায় খাবেন
কক্সবাজারে বিভিন্ন মানের এবং ধরণের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে মধ্যম মানের বাজেট রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, এবং নিরিবিলি। সিজন অনুযায়ী খাবারের দাম কিছুটা উঠানামা করে।
সাগরের বিভিন্ন মাছ, বিশেষ করে চিংড়ি, রূপচাঁদা, লাইট্যা, ছুরি মাছ, এবং শুটকির ভর্তা পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান
কক্সবাজার ভ্রমণে শুধু সমুদ্র সৈকত নয়, আশেপাশের আরও অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ আছে। আপনার সময় ও সুবিধা অনুযায়ী আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে পারেন, যাতে বিভিন্ন স্থানে ঘোরার অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।
- কলাতলী বিচ
- সুগন্ধা বিচ
- লাবনী বিচ
- ডায়বেটিস বিচ
- ইনানী বিচ
- পাটুয়ারটেক বিচ
- মিনি বান্দরবান
- হিমছড়ি
- মেরিন ড্রাইভ রোড
- রামু রাবার বাগান
- বার্মিজ মার্কেট
- রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড একুরিয়াম
- মহেশখালী
- সোনাদিয়া দ্বীপ
- আদিনাথ মন্দির
- আদিনাথ মেলা- ফাল্গুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়
- বড় রাখাইন পাড়া বৌদ্ধ মন্দির
- স্বর্ণ মন্দির
- ঝাউ বাগান
- চরপাড়া বিচ
- পান বাগান
- লবণ চাষ
কক্সবাজারে কোথায় শপিং করবেন
কক্সবাজারে শপিং করার জন্য অনেক মার্কেট রয়েছে। বিশেষ করে বীচের পাশের মার্কেটগুলোতে বার্মিজ চকলেট, আচার, জামাকাপড়, জুতা, মুক্তার সামগ্রী, ক্যাপ, খেলনা ও শুটকি পাওয়া যায়। শহরের মার্কেটগুলোতে ভালো কালেকশন পাওয়া যায়, বিশেষ করে শুটকি কেনার জন্য শহরের বড় শুটকি মার্কেট বেশ জনপ্রিয়। তবে কেনাকাটার সময় অবশ্যই সর্তক থাকতে হবে যেন খারাপ প্রোডাক্ট দিয়ে দিতে না পারে।
কক্সবাজার ভ্রমণ টিপস
- যেকোনো সমস্যায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা নিন (হটলাইন: +০৮৮০১৩২০ ২২২২২২)।
- কম খরচে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে অফসিজনে বেড়াতে যান।
- কেনাকাটা ও যাতায়াতের ভাড়ার ক্ষেত্রে দরদাম ঠিকভাবে করুন।
- কোনো রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার দেওয়ার আগে দাম জিজ্ঞেস করুন।
- হোটেল বুক করার আগে তার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
- জোয়ার-ভাটার সময় অনুযায়ী সাগরে নামুন।
কক্সবাজারে যেভাবে চলাফেরা করবেন
কক্সবাজার বাংলাদেশের সেরা পর্যটন শহর, যেখানে চলাচলের জন্য বিভিন্ন ধরনের যানবাহন সহজেই ভাড়ায় পাওয়া যায়, যেমন প্রাইভেটকার, জিপ, চান্দের গাড়ি, রিক্সা এবং অটো রিক্সা। শহরের ভেতরে ও আশেপাশে ঘোরার জন্য অটো রিক্সা সবচেয়ে উপযুক্ত। মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে চাইলে চান্দের গাড়ি ভালো, কারণ এর উপরের অংশ খোলা থাকে যা ভ্রমণের আনন্দ বাড়ায়। এক গাড়িতে ১০-১২ জন বসতে পারে। ইনানী যাওয়ার জন্য চান্দের গাড়ি বা সিএনজি নিলে কম সময়ে পৌঁছানো সম্ভব। আগে থেকেই ভাড়া করলে ড্রাইভার সময় মতো গাড়ি নিয়ে হাজির হবে।
আরো পড়ুন