হন্টন প্রজেক্ট । দিন-১২ঃ রামপুরা টু ডেমরা

দুই মাসের কাছাকাছি হয়ে গেছে লম্বা কোন হাঁটা দেই না। বেশ কয়েকদিন থেকে বিষয়টা মনে মনে খোঁচাচ্ছিলো। আজকে ভার্সিটি যাওয়ার সময় যখন মনে মনে প্ল্যান করছিলাম, ডেমরা যাবো। তখনই মাথায় আসলো হেঁটে গেলেই তো পারি। যেই ভাবা সেই কাজ। ক্লাস শেষ করে হাঁটা শুরু।

আজকের আবহাওয়া অসম্ভব রকম ভালো ছিলো। মেঘলা আকাশ সাথে মৃদু মন্দ ঠান্ডা বাতাস। হাঁটার জন্য এরচেয়ে ভালো আবহাওয়া হতে পারে না। ভার্সিটি থেকে যখন রওনা দিলাম তখন ঘড়িতে ২টা বেজে ০৮ মিনিট। রোদের বদলে আকাশে মেঘেদের খেলা দেখতে দেখতে হাঁটতে বেশ লাগছিলো। আফতাব নগরের ভিতর দিয়ে হেঁটে ডি ব্লকের বাঁশের সাঁকো দিয়ে বনশ্রী রোডে ঢুকলাম। বামপাশে বেগুনবাড়ি খাল আর ডানপাশে ইট-পাথরের বাড়ি। বাস-ট্রাকের মাঝ দিয়ে আমি হেঁটে চলছি।

বর্ষাকাল হওয়ায় লেকের পাশের গাছগুলো ছিলো প্রাণবন্ত সবুজ। দেখেও চোখের শান্তি। শুধু লেকের পরিবেশ ভালো হলেই একবারে ১০০ তে ১০০ হয়ে যেত। অনেকদিন পর হাঁটায় বেশ হেলেদুলে হেঁটে নতুন হওয়া রাস্তার মাথায় আসলাম ২.৩৬ মিনিটে। স্টাফ কোয়াটারের এই রোড হওয়ার পর বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কত যে বাস এখন চলে এই রোডে। ডেমরা থেকে আমার বাসা মিরপুর পর্যন্ত সরাসরি বাস আছে। বছরখানেক আগেও যেটা চিন্তা করা যেত না।

কিছুদূর হাঁটতে দূরে একটা ব্রিজ চোখে পড়ে। দূর থেকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছিলো। ব্রিজের কাছে গিয়ে দেখি নিচের পানি কচুরিপানা দিয়ে ভরা। ব্রিজের পাশে ষ্টাফ কোয়াটার ৬ কি.মি. রোড সাইন।

যেদিকে দুচোখ যায় শুধু পানি আর পানি। বর্ষার আগমনে চারিদিকে সাজ সাজ রব। একটু পর পর পুকুর/খাল/জলাশয় দেখা যাচ্ছিলো। মেঘলা আকাশ আর বাতাসের সাথে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে হাঁটতে বড়ই শান্তি।

বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর আরেকটা ছোট ব্রিজের কাছে চলে আসলাম। জায়গার নাম নগদার পাড়, খিলগাঁও। দেখে অবাক হলাম। রামপুরা-ডেমরা সংযোগ রোডের এই অংশটা খিলগাঁও। রাস্তার পাশে চটপটির দোকান দেখে ঢুকে পড়লাম। অনেক বেশি ধনে পাতা দিয়ে বানানো চটপটি খেয়ে বহুদিন পর তৃপ্তি পেলাম। ঢাকাতেও এত ভালো চটপটি অনেকদিন খাই নাই। দোকানদার সাজু ভাইয়ের কাছে জানলাম এই ধনে পাতা তিনি নিজেই চাষ করেন। দোকানটাও বেশ সুন্দর। বিকালবেলা আড্ডা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত জায়গা। চটপটি খেয়ে আবার হাঁটা ধরলাম।

অনেকক্ষন ধরে থেমে থেমে হাঁটায় এবার ঠিক করলাম থামাথামি বাদ দিয়ে একটানা হাঁটবো। কিন্তু চারপাশের পানির দৃশ্য আমাকে বার বার থামিয়ে দিচ্ছিলো। নদীর পাড়ের মত বাতাস। সে বাতাসে হাঁটতে ইচ্ছা হয় না। ইচ্ছে হয় পাড়ে বসে থাকি, নয়তো নৌকা নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে পড়ি। ঢাকার মাঝে এত সুন্দর জায়গা কল্পনা করা যায় না। বর্ষার বৃষ্টি যেন নিজ হাতে রাস্তার দুপাশকে সাজিয়ে তুলেছে।

ষ্টাফ কোয়াটার থেকে দুই কিলোমিটার আগে পা ব্যাথা করা শুরু করলো। অনেক হাঁটা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে কোন বিরতিও নেই নাই। মনের জোরে এগিয়ে চললাম। যখন রাস্তার পাশে ১ কি.মি. লেখা সাইনটা দেখলাম তখন পায়ের গতি বেড়ে গেল। ১২ মিনিটে সেই পথটুকু পাড়ি দিয়ে আমার কাঙ্ক্ষিত ব্রিজের উপর চলে আসলাম। সময় তখন বিকাল ৪.৩২ মিনিট। প্রায় ২.৩০ ঘন্টা ধরে হাঁটা হয়েছে ১১ কিলোমিটারেরও বেশি পথ।

আজকের হাঁটার রুট,
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি-> বনশ্রী-> ত্রিমোহিনী সেতু-> নাগদার পাড়-> মস্তমাঝি-> আমুলিয়া-> ষ্টাফ কোয়াটার

রোজ সোমবার
২৫ জুলাই, ২০১৬

Feature Image by pinterest

Spread the love