আজকে আসলে হাঁটার কোন প্ল্যান ছিলো না। এক বন্ধুর বাসায় ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দুপুরে সেই প্ল্যান বাতিল হয়ে যায়। গত পরশু সার্জিল ভাইয়ের পোস্টে দেখলাম জাগৃতি প্রকাশনীর বইয়ে ডিসকাউন্ট চলতেছে। ভাবলাম যাই শাগবাগ থেকে ঘুরে আসি সাথে হাঁটাও হবে। গোসল করে ৪.৩৪ মিনিটে বের হয়ে পড়লাম। আজকের রুট হিসেবে ঠিক করলাম লেগুনা যেই রোডে ফার্মগেট যায়। তারপর বাসের রুটে শাহবাগ।
বাসা থেকে বের হয়ে ভিতরের অলিগলি দিয়ে কিছুটা পথ শর্টকাট করে ৬০ ফিট রোডে উঠলাম। আমার ইচ্ছা আছে একদিন ৬০ ফিট রোডের শুরুর মাথা থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত হাঁটাবো। সে যাই হোক আজকের বাইরের আবহাওয়া ছিলো চমৎকার। হাঁটার জন্য পারফেক্ট। জোরে জোরে হাঁটার পরও ঘাম হচ্ছিলো না তেমন।
২৪ মিনিট হাঁটার পর একটু একটু ক্ষুধা অনুভূত হচ্ছিলো। দুপুরে কিছু খাওয়া হয় নাই। ইচ্ছা ছিলো ১ ঘন্টা হাঁটার কিছুক্ষন রেস্ট নিবো সাথে হালকা কিছু খেয়ে নিবো। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে আগাঁরগাও এর কাছে এক টং দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দুই পা অটোমেটিক দোকানে ঢুকে পড়লো। দুই হাত রুটি-কলা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষে বের হয়ে দেখি ক্ষুধা মিটে নাই। আবার এক হোটেলে ঢুকে পড়লাম। এইখানে খাওয়ার পর পেট ভরলো। আবার হাঁটা শুরু করলাম।
আগাঁরগাও-শ্যামলী লিঙ্ক রোডের মাথায় যাত্রী ছাউনির কাছে এসে পিছনে ফিরে অস্ত যাওয়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে আর হাঁটতে ইচ্ছা হলো না। এক ইট-পাথরের দালানের পিছনে সূর্যের হারিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকলাম। আধা ঘন্টার মত বিরতি নেওয়ার পর এবার মনে হলো না ঠিকমত হাঁটা দরকার। অনেক বিশ্রাম করা হয়ে গেছে।
এই শহরের ফুটপাত গুলোর নিজস্ব গল্প আছে। আমি যখন হাঁটি তখন একেক দিন এক এক ফুটপাত দিয়ে হাঁটি। শেরে বাংলার সামনের মাঝখানের যে ফুটপাত। সেটার গল্পটা অনেক বেশিই সুন্দর। পুরো ফুটপাত জুড়ে বড় বড় গাছ। গাছ কেটে নয় বরং গাছ রেখেই ফুটপাতটা বানানো হয়েছে। দেখেও শান্তি, হেঁটেও শান্তি। ইদানিং আবার ফুটপাত গুলোতে কিছুদূর পর পর ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। এটা দেখেও ভাল্লাগে। আগে ময়লা ফেলার জন্য জায়গা খোঁজা লাগতো এখন হাতের কাছে ডাস্টবিন। যদিও ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও অনেক রাস্তাতে ময়লা ফেলছিলো। আশা করা যায় কয়েকদিন পর সবাই এই নতুন ডাস্টবিনে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। শহরের রাস্তা হবে ময়লা মুক্ত।
দ্বিতীয় দফা হাঁটা শুরু করার পর থেকে কোন ক্লান্তি লাগছিলো না। একটানে হেঁটে শাহবাগ চলে আসলাম। আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়ে জাগৃতিতে বই দেখলাম। কোন বই পছন্দ না হওয়ায় কেনা হয় নাই। এরপর গেলাম গন গ্রন্থাগারে। সেখানে বই উৎসব চলতেছে। বিভিন্ন প্রকাশনীর বই ঘেঁটে গাছতলায় বসে পড়লাম। প্রায় ৫.৫ মাইল হাঁটা হইছে পা দুটোকে একটু বিশ্রাম দেওয়া দরকার।
এক বন্ধু আসলো টিএসসিতে। ওর সাথে আড্ডা দিয়ে আমাকে গ্রীন রোড নামিয়ে দিলো। এবার বাসায় ফেরার যাত্রা। রওনা দিলাম রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে। মনে মনে হিসাব কষলাম বিশ্রাম সহ হয়ত ১২ টা বেজে যাবে বাসায় যেতে যেতে। কিন্ত আমার হিসাব ভুল ছিলো।
পান্থপথ মোড় পার হয়ে চিন্তা করা শুরু করলাম কোন রোড দিয়ে যাবো। আসার সময় তো খামার বাড়ি হয়ে আসছি। আবার একই পথে যাবো। সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে হাঁটতে থাকলাম। আনন্দ সিনেমা হলের সামনে এসে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম নভো থিয়েটারের সামনে দিয়ে যাবো। এবং চরম একটা ভুল করলাম।
নভো থিয়েটারের সামনে আসার পর এক পুলিশ ইশারায় ফুটপাত ছাড়তে বললো। ফুটপাত ছেড়ে নিচে দিয়ে হেঁটে সামনে যাওয়ার পর বললো এখন যাওয়া যাবে না ভিআইপি যাবে। প্রধানমন্ত্রী আর কোন এক দেশের প্রধানমন্ত্রী মিটিং শেষে এখন ফিরবেন। গাড়ি, পথচারী সব আটকে রাখা হয়েছে। এক পুলিশ ভাই বলতেছিলো আমাদেরও আপনাদের আটকে রাখতে ইচ্ছে করে না কিন্তু কি করবো বলেন, ডিউটি। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষার পর সব গাড়ি গেল আর আমরাও ছাড়া পেলাম।
ছাড়া পাওয়ার পর পা যেন অসীম শক্তি পেয়ে গেছে। জোরে জোরে হাঁটতে লাগলাম। শেরে বাংলার সামনে এসে ভয় ভয় করতে লাগলো। এখনই না কে এসে ঠেক দিয়ে বসে। আল্লাহর অশেষ রহমতে কেউ ঠেক দেয় নাই। রাত ১১টা ৩৮ মিনিটে সুস্থ সবল অবস্থাতে বাসায় ফিরতে পেরেছি।
বাসায় ঢুকার পর আম্মুর প্রথম কথা, “এত টাকা দিয়ে তোরে পড়ালেখা করাইয়া কি লাভ যদি রাস্তাতেই পইড়া মইরা থাকোস।” এই কথা নাকি আব্বু আম্মুকে বলছে। আজকে টোটাল হাঁটা হইছে প্রায় ১৭-১৮ কিলোমিটার।
আজকের হাঁটার রুট,
বাসা-> ৬০ ফিট-> আগাঁরগাও-> খামার বাড়ি-> ফার্মগেট-> বাংলা মোটর-> শাহবাগ
গ্রীনরোড-> পান্থপথ-> ফার্মগেট-> নভোথিয়েটার-> আগাঁরগাও-> তালতলা-> শ্যাওড়াপাড়া-> কাজীপাড়া-> ৬০ ফিট-> মোল্লাপাড়া-> বাসা
রোজ বুধবার
০৪ মে, ২০১৬
- হন্টন প্রজেক্ট
Feature Image by pinterest