হন্টন প্রজেক্ট । দিন-১০ঃ মিরপুর-১ টু টিএসসি

সূর্যের তীব্র দাবদাহে জীবন যেখানে অতিষ্ঠ সেখানে শুধু শখের বসে লং ওয়াক করাটা বোকামি। আজ সকালে Tracks নামক একটা মুভি দেখতেছিলাম। এক মহিলা চারটা উট আর একটা কুকুর নিয়ে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে ১৭০০ মাইল রাস্তা ট্রেক করে। মুভির শেষে এসে আমার মধ্যে চিন্তা আসলো মরুভূমিতে যদি কেউ ১৭০০ মাইল রাস্তা হাঁটতে পারে তাহলে এই শহরে কি এমন গরম পড়েছে যে আমি হাঁটতে পারবো না!!! বিকালে তাই সিদ্ধান্ত তাই আমার অনেক প্রিয় একটা জায়গা টিএসসি তে হেঁটে যাবো। রুট হিসেবে বেছে নেই বাস যেই রুটে যায়।

গোসল করে মনে মনে নিজেকে তৈরি করে ৫.৩২ মিনিটে বাসা থেকে বের হই। শুরুতে আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকি। অনেক দিন লম্বা হাঁটা দেই না। তাই শুরুতেই প্রেশার দিতে চাচ্ছিলাম না। আর ইচ্ছা ছিলো যাওয়া-আসা দুইটাই হেঁটে করবো। যদিও পরে সেটা হয় নাই।

আজ বাইরে ভালোই বাতাস ছিলো। গরম লাগলেও বাতাসের কারনে অস্বস্তি লাগতেছিলো না। ১০ মিনিট হাঁটার পর মেইন রোডে উঠি। তাপহীন হেলে পড়া সূর্যকে পশ্চিম দিকে রেখে হাঁটতে থাকি। রাস্তার পাশে হঠাৎ হঠাৎ কৃষ্ণচূড়া গাছ চোখে পড়ে। সারাগাছ ফুল দিয়ে ছাওয়া। যেন গাছে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি কল্পনা করতে থাকি চারিদিকে আর কিছু নেই। আমার দুপাশে শুধু কৃষ্ণচূড়ার গাছ। আমি আগুন রাঙ্গা পথের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। এ জগতে শুধু আমি আর কৃষ্ণচূড়া ফুল সত্য বাকি সব মিথ্যা। এ এক অন্যরকম ঘোর। মনে মনে কল্প ডায়েরীতে নানা কথা লিখতে থাকি. . .

তিন রাস্তার মোড়ে এসে বামে মোচড় নিতেই সূর্য পিছনে পড়ে যায়। ততক্ষনে সূর্য ডুবেও গেছে শুধু আভা ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে আমি ছিলাম। আধা ঘন্টা হাঁটার পর শরীর বিশ্রাম নিতে চাচ্ছিলো। কিন্তু আমি নাছড়বান্দা এক ঘন্টার আগে কোন বিশ্রাম নেই তা যত কষ্টই হোক। সারাদিনে তেমন কিছু খাওয়াও হয় নাই। পেটও সেটা জানান দেওয়া শুরু করলো। অবশেষে এক ঘন্টা পরে কলেজ গেট এসে রাস্তার পাশে বসলাম। ৫ মিনিটের বিশ্রাম নিতেই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সব ঘাম শুকিয়ে গেছে, বেশ ফুরফুরা লাগছে নিজের কাছে। আবার হাঁটা শুরু করলাম। আসাদ গেট এসে আর পারলাম না, মুখে কিছু দিতেই হলো।

খাওয়ার পর হাঁটতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম আমার হাঁটার গতি অনেক বেশিই কম। তাই লক্ষ্য ঠিক করলাম। টিএসসি যাওয়ার আগে আর কোন থামাথামি নেই সাথে গতিও বাড়াবো। কলাবাগান পার হওয়ার পর ডান পায়ের রগে ব্যাথা শুরু করলো। পাত্তা দিলাম না। এত ছোটখাট জিনিসে পাত্তা দিলে হয় না। আমার তখন একটাই লক্ষ্য কখন টিএসসি পৌঁছাবো। কলাবাগান, ল্যাব এইড, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত একটানে হেঁটে চলে আসলাম। পা ব্যাথা থাকলেও পাত্তা না পেয়ে আর বেশি বিরক্ত করে নি।

নীলক্ষেত মোড় থেকে বামে মোড় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে ঢোকার পর মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠে। বাসা থেকে যখন বের হয়েছিলাম তখনও ১০০% নিশ্চিত ছিলাম না যে আমি আসতে পারবো কিনা। আর এখন ২ ঘন্টার ব্যবধানে আমি আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বে। এ অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব না। এটা যে আমার প্রথম হাঁটা বা এত বেশি আমি কখনো হাঁটি নাই তা না। তবুও প্রতিবার আমার গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে আগে মুখে হাসি ফুটে উঠে। অন্যরকম এক প্রশান্তি কাজ করে। এ প্রশান্তির দরকার আছে। মনের এতটুকু শান্তির জন্যই তো আসলে বেঁচে থাকা. . .

টিএসসির মোড়ে গিয়ে যখন বসি তখন ঘড়িতে সময় ৭.৫৫ মিনিট। ইচ্ছা ছিলো ১ ঘন্টা ঘুরে ফিরে আবার হেঁটে বাসায় যাবো। কিন্তু আশু ভাইয়ের সাথে দেখা হওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয় নি। তার সাথে শ্যাওড়াপাড়া পর্যন্ত এসে তারপর আবার হেঁটে বাসায় আসি। হাঁটা হয়েছে প্রায় ১২ কিলোমিটার।

আজকের হাঁটার রুট,
বাসা-> চায়নিজ-> টেকনিক্যাল-> কল্যানপুর-> শ্যামলী-> কলেজ গেট-> আসাদ গেট-> ধানমন্ডি-২৭-> ধানমন্ডি-৩২-> কলাবাগান-> সায়েন্স ল্যাব-> নিউ মার্কেট-> নীলক্ষেত-> টিএসসি

রোজ শনিবার
৩০ এপ্রিল, ২০১৬

Feature Image by deviantart

Spread the love