হন্টন প্রজেক্ট । দিন-৭ঃ মিরপুর-১ টু উত্তরা

পরীক্ষার কারনে বেশ কয়েকদিন হাঁটাহাঁটি করা হচ্ছিলো না। দুই দিনের ছুটি পেয়ে তাই ভাবলাম আজকে হেঁটে আসা যাক। হন্টন প্রোজেক্টের শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিলো আমার বাসা থেকে হেঁটে উত্তরা যাবো। গুগল ম্যাপে ঘাটাঘাটি করে দেখলাম ১৬-১৭ কিলোমিটারের মত হবে রাস্তা। তাছাড়া উত্তরাতে অনেক ফ্রেন্ড থাকে আড্ডা দেওয়া যাবে। এই ভেবে উত্তরা যাবো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।

দুপুর ২.১৪ মিনিটে বিসমিল্লাহ বলে ঘর থেকে বের হয়ে পড়লাম। অনেক দূরের পথ তাই শুরুতেই জোরে হেঁটে পথ এগিয়ে রাখতে চাচ্ছিলাম। আমার বাসা থেকে মিরপুর-১০ হেঁটে যেতে সময় লাগে ২২-২৫ মিনিট। সেই টার্গেটে হেঁটে ২২ মিনিটেই চলে গেলাম। শীতকাল তাই ঘন ঘন “ছোট কাজের” বেগ আসে কিন্তু কাজ সাড়ার জায়গা নেই দেখে গ্যালাক্সী হাসপাতালে ঢুকলাম। রেস্টরুমের খোঁজে পাঁচতলায় গিয়ে দেখলাম দরজায় তালা দেওয়া! দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে কাজ না সেরেই আবার হাঁটা দিলাম।

আজ হাঁটতে কোন ক্লান্তিবোধ করতেছিলাম না। একটানা একঘন্টার মত হেঁটে দুপুর ৩.১৬ মিনিটে ইসিবি চত্বর চলে আসলাম। ইসিবি চত্বর থেকে ফ্লাইওভারে উঠবো নাকি নিচ দিয়া যাবো বুঝতেছিলাম না। নিচ দিয়ে রাস্তা চিনি না দেখে ফ্লাইওভারের উপরে উঠলাম। আর মস্ত এক বোকামি করলাম। শরীর ঘেষে বাস, গাড়ি, সিএনজি, বাইক সোঁ সোঁ শব্দ তুলে যাচ্ছিলো আর আমি ভয়ে শেষ হচ্ছিলাম। হাঁটার গতি একদম কমে গেল। একটু পর পর পিছনে ফিরে দেখতেছিলাম গাড়ি আসতেছে কি না। রেলিং ঘেঁষে হাঁটায় রেলিং এর ময়লা জামায় লাগতেছিলো কিন্তু আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আমার মনে শুধু একটা ভয় কাজ করতেছিলো, কোন গাড়ি এসে না গায়ে লাগিয়ে দেয়। হঠাৎ সামনের দিক থেকে দুইটা ছেলেকে আসতে দেখে মনে একটু সাহস পেলাম। ওরা যাচ্ছে গাড়ি চলাচলের বিপরিত দিক দিয়ে মানে ওরা দেখতে পাচ্ছিলো সামনে থেকে কি গাড়ি আসতেছে কিন্তু আমি সেটা পারতেছিলাম না। নানারকম উদ্ভট দুর্ঘটনার চিন্তা মাথায় আসতে থাকলো। আল্লাহর অশেষ রহমতে ২২ মিনিট পর ফ্লাইওভার শেষ হলো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ফ্লাইওভার দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম নিচ দিয়েও যাওয়ার রাস্তা আছে। নেক্সট টাইম নিচ দিয়েই যাবো, আর উঠতেছি না ফ্লাইওভারে।

শ্যাওড়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পৌঁছালাম বিকাল ৪.০২ মিনিটে। তেমন ক্লান্তি না লাগলেও জিরিয়ে নেওয়ার জন্য বসলাম সাথে রুটি-কলা খেয়ে পেটকেও শান্তি দিলাম। ৪.১৪ মিনিটে আবার হাঁটা শুরু করলাম।

হাঁটতে হাঁটতে আমার উত্তরার ফ্রেন্ডদের কে ফোন দিলাম। প্রথমে রায়হান নাঈমকে ফোন দিলাম, বললো ফাইনাল প্রেজেন্টেশনের কাজ করতেছে বের হতে পারবে না। এরপর ফোন দিলাম ইমনকে, বললো অনেক ক্লান্ত আজকে বের হওয়া সম্ভবই না। এরপর ফোন দিলাম উত্তরার জাহিদকে, বললো সে ঢাকায় নাই। তিনজন না বলে দেওয়ায় আর কাউকে ফোন দিতে ইচ্ছা হলো না। একাগ্র মনে হাঁটতে থাকলাম।

দুই ঘন্টার উপর হয়ে যাওয়ায় ক্লান্তি লাগা শুরু করলো। মনের জোরে হাঁটতে থাকলাম। এয়ারপোর্টের আগে আর থামবো না সিদ্ধান্ত নিলাম। খিলখেতের রাস্তায় এসেই মনে হতে থাকলো, “এয়ারপোর্ট আর কত দেরি পাঞ্জেরি।” এয়ারপোর্টের নিজস্ব সম্পত্তি দেখতে দেখতে হাঁটতে থাকলাম। বিশাল বিশাল সব জলাশয়। দেখতেছি আর হাঁটতেছি কিন্তু রাস্তা আর শেষ হয় না। অবশেষে পা যখন আর পারতেছেই না তখন ৫.০১ মিনিটে এয়ারপোর্ট পৌঁছালাম।

রাস্তার পাশে যাত্রী ছাউনি দেখে সেখানেই বসে পড়লাম। চিন্তা করতে থাকলাম এখন কি করবো। উত্তরাতে তো কেউ নাই, উত্তরায় কি যাবো নাকি এখান থেকে বাসে উঠে বাসায় চলে যাবো। অনেক হিসাব নিকাশের পর ঠিক করলাম উত্তরাতে যাওয়ার জন্য যখন বের হইছি তখন উত্তরাতেই যাবো। এতচিন্তা করতে করতে কখন যে ২০ মিনিট পার হয়ে গেছে টেরই পায় নি।

৫.২১ মিনিটে এয়ারপোর্ট থেকে উত্তরার উদ্দ্যেশে হাঁটা দিলাম। জসীমউদ্দিন রোডে আসার পর ভাবতে থাকলাম উত্তরাতে তো চলেই আসলাম, কোথায় গিয়ে থামবো। নর্থ টাওয়ার, হাউস বিল্ডিং হবে শেষ স্টপেজ মনে মনে ঠিক করলাম। একটা সময় গিয়ে পা আর চলে না। চলেই না। টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে হাউসবিল্ডিংও যেন মরুভূমির মরীচিকা হয়ে গেল। যেই বিল্ডিং দেখি সেটাই নর্থ টাওয়ার মনে হয়। কাছে গিয়ে দেখি সবই ভুল। মরীচিকার পিছে হাঁটতে হাঁটতে শেষ পর্যন্ত ৬.০১ মিনিটে নর্থ টাওয়ার গিয়ে পৌঁছালাম আর হাঁটাও শেষ হইলো।

গুগলের হিসাব মত প্রায় ১৬-১৭ কিলোমিটারের মত হাঁটা হয়েছে। পেসার এপসের হিসাব অনুযায়ী ২২ হাজারের বেশি স্টেপ নেওয়া হয়েছে। ঘড়ির হিসাব মতে সময় লেগেছে প্রায় চার ঘন্টা।

আজকের হাঁটার রুট,
আমার বাসা(মিরপুর-১) -> কাশেমের দোকান ->৬০ ফিট রাস্তা -> ফলপট্টি রোড -> ১০ নাম্বার গোল চত্বর -> মিরপুর-১১ -> কেএসসির পাশের রোড -> কালসীর মোড় -> ইসিবি চত্বর -> মাটিকাটা ফ্লাইওভার -> কুর্মিটোলা হাসপাতাল -> শেওড়া -> খিলখেত -> এয়ারপোর্ট -> জসীমউদ্দীন রোড -> নর্থ টাওয়ার

রোজ শুক্রবার
১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

Feature Image by scgshow

Spread the love